ব্ল্যাকবিয়ার্ড জলদস্যু – সমুদ্রের ত্রাস
Blackbeard Flag
RootOfAllLight, CC BY-SA 4.0 <https://creativecommons.org/licenses/by-sa/4.0>, via Wikimedia Commons
জলদস্যু ব্ল্যাকবিয়ার্ড- কুখ্যাত নাকি বিখ্যাত!
উত্তাল সমুদ্র! দুলছে দুটো জাহাজ। একদল মানুষ ভয়ে জড়সড়, আরেকদল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। উত্তেজনার পারদ চড়ছে ক্রমশ। বড় জাহাজের নাম, কনকর্ড। ফ্রেঞ্চ মার্চেন্টের আদরের সমুদ্রযান। চোখে দূরবীন লাগালেন ক্যাপ্টেন। দূরে দেখা যাচ্ছে আরেকটা জাহাজ। আকারে অনেক ছোট, কিন্তু ভাবগতিক বোঝা যাচ্ছে না! অভিজ্ঞ চোখে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন তিনি। চোখ সরু করে দেখলেন ডেকে পা রেখে কোমরে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকা অকুতোভয় প্রতিপক্ষ ক্যাপ্টেনকে। লোকটার লম্বা দাড়ি, লম্বা চুল, মাথায় হাফ-মুন হ্যাট, কোমরে তলোয়ার। ভীত যাত্রীদের সাহস দিলেন কনকর্ডের অধিনায়ক। ভয় করার কী আছে? তার জাহাজে চল্লিশটি বড় কামান ধরে, কার বুকের পাটা আছে লাগতে আসে! কিন্তু সেই ভাবনাই কাল হলো। কাছে এসে পতাকা তুলে দিল ছোট জাহাজটা। পতাকায় ভয়ংকর ছবি, কালো জমিনে আঁকা ভয়াল কঙ্কাল, হাতে বল্লম ধরে ফুঁড়ে দিচ্ছে হৃদপিণ্ড! গুলি চলল ক্রমাগত! এরপর পুরোটাই ইতিহাস।
বলছিলাম বিখ্যাত জলদস্যু ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকবিয়ার্ড ওরফে এডওয়ার্ড টেকের কাহিনী। সে-দিন যুদ্ধে জয় হয়েছিল ছোট জলদস্যু জাহাজের মালিক এডওয়ার্ডের। এবং বড় ফ্রেঞ্চ জাহাজটা দখল করেই আপন করে নিয়েছিল এডওয়ার্ড। জাহাজের নাম পাল্টে দিয়েছিল, ‘কুইন অ্যান’স রিভেঞ্জ।’ সেসময় অত বড় পাইরেট শিপ কোনও জলদস্যুর অধীনে ছিল না। খুব দ্রুতই তাই প্রতিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠেছিল ব্ল্যাকবিয়ার্ড পাইরেটস। সেই ত্রাস আজও সকলের মনে অম্লান। জলদস্যু ব্ল্যাকবিয়ার্ড আজও সমুদ্রের অবিসংবাদী কিংবদন্তী।
মানুষ হিসাবে এডওয়ার্ড টেককে বর্ণনা করতে গেলে, প্রথমেই আসে তার ভয়ালদর্শন রূপের কথা। ছয় ফুট চার ইঞ্চির সুবিশাল শরীরের অধিকারী সে। বিভিন্ন বইতে তাকে এতটাই ভয়াল হিসেবে দেখানো হয়েছে যে অবিশ্বাস মনে হয়! তার লম্বা লম্বা, চুল দাড়ি। কিংবদন্তী আছে, চুলের আগায় আগুন জ্বলত আক্রমণের সময়। এই তথ্য পুরোপুরি মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ আছে। তবে ঠিক চুলে আগুন ধরাত না ব্ল্যাকবিয়ার্ড, সেখানে কৌশলে লাগিয়ে রাখা মোম কিংবা অন্য বিস্ফোরকে আগুন লাগিয়ে কাজ সারত। আর তাতে যা ধুয়ো হত, সেটাতেই ভড়কে যেত প্রতিপক্ষ।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডের জন্ম ১৬৮০ সালের দিকে। ১৭০২ থেকে ১৭১৩ পর্যন্ত সমুদ্ররক্ষক বেসরকারি সৈন্যদলে কাজ করে সে। সেসময় যে জাহাজে পোস্টিং ছিল তার নাম, ‘কুইন অ্যান’স ওয়ার’। ধারণা করা যায়, সেই নাম থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের জাহাজের নামকরণ করেছিল এই কুখ্যাত জলদস্যু। ১৭১৬ সাল নাগাদ বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ডের জলদস্যু দলে যোগ দেয় ব্ল্যাকবিয়ার্ড। ক্যারিবিয়ানের দুর্ধর্ষ এই জলদস্যুর অধীনে সম্ভাবনাময় লুটতরাজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলে এডওয়ার্ড। এক পর্যায়ে ওকে যথার্থ সম্মান দিয়ে হর্নিগোল্ড একাংশের কমান্ডার করে দেয়।
১৭১৭ সালে দিকে শুভবুদ্ধির উদয় হয় জলদস্যু বেঞ্জামিনের। সে দস্যুবৃত্তি ছেড়ে সুবোধ জীবন বেছে নিতে প্রস্তুত হয়। তৎকালীন পদ্ধতিতে সাধারণ ক্ষমা নিয়ে শান্তির জীবণ যাপণ শুরু করে। অনেকেই তার সাথে যোগ দিলেও, ব্ল্যাকবিয়ার্ড দেয় না। সে নিজের দল গঠনে সচেষ্ট হয়। আর তার কিছু পরেই সুবিশাল জাহাজ, ‘কুইন অ্যান’স রিভেঞ্জ’ দখল করে দাপিয়ে বেড়ায় সমুদ্র।
অদ্ভুত জীবন এই জলদস্যু শ্রেণীর। সে-সময় সমাজের কোথাও গণতন্ত্রের চর্চা না থাকলেও এক অর্থে প্রতিটি জলদস্যু জাহাজেই এই চর্চা ছিল। জাহাজের ক্যাপ্টেন একজন হলেও, কেবল যুদ্ধ এবং লুণ্ঠিত সম্পদ ভাগাভাগির সময় ছাড়া বেশিরভাগ সময়েই তার চেষ্টা করতে হত নাবিকদের মন জুগিয়ে চলতে। কেননা, যদি সর্দারের কাজ ওদের পছন্দ না হত, তাহলে ওরা অনায়াসে পাইরেট কোডের মাধ্যমে নতুন সর্দার নির্বাচন করে নিতে পারত। ব্ল্যাকবিয়ার্ড ছিল যথেষ্ট কৌশলী। শুধু প্রতিপক্ষকেই নয়, বরং বন্ধু নাবিকদেরও ভয় দেখিয়ে কাজ আদায় করতে পারতো সে। তাই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ খুব একটা মাথা তোলেনি।
সেসময় সমুদ্রে আরও অনেক জলদস্যু ছিল। এক অর্থে বলা যায় ব্ল্যাকবিয়ার্ড ধ্বংসজজ্ঞের দিক থেকে কোনও ভাবেই প্রথম ছিল না। তবুও তাকে সবাই সবচেয়ে বেশি ভয় পেত। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের পতাকা বাতাসে উড়তে দেখলেই শত্রু হাল ছেড়ে দিত, পালিয়ে বাঁচতে চাইত। অনেকেই আত্মসমর্পণ করে নিতো বিনা বাঁধায়। তখন জাহাজ লুটপাট করে ধন সম্পদ ভাগাভাগি হত। জলদস্যুরা এসব সম্পদ অনায়াসেই খরচ করার উপায় বাৎলে নিতো, খুব বেশি জমানোর আগ্রহ তাদের মধ্যে ছিল না।
১৭১৩ সাল নাগাদ, চার বড় বড় শক্তি, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, সুসম্পর্ক গড়ে তোলে নিজেদের মধ্যে। তারা বিভিন্ন দ্রব্যাদি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চালান করত। চিনি যেত ইউরোপে, বন্দুক আর বিভিন্ন পণ্য যেত আফ্রিকায়। আমেরিকায় দাস পাচার হত সমুদ্র পথে। সেসব সম্পদবাহী জাহাজ টার্গেট করত বিভিন্ন জলদস্যুর দল। এদের মূল উদ্দেশ্যই থাকত কীভাবে জাহাজ না ডুবিয়ে মালামাল উদ্ধার করা যায়। ডুবে গেলে লাভ ছিল না, তখন সাধের সম্পদের মালিকানা চলে যেত অতল জলরাশির হাতে। ব্ল্যাকবিয়ার্ড তার সক্রিয় সময়ে এরকম ১৭-১৮ টি জাহাজ দখল করতে সক্ষম হয়। যদিও সব জাহাজ সে নিজের ব্যবহারের জন্য রাখে নি। কারণ জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করা ছিল ভয়ংকর কঠিন কাজ। আর সব যুদ্ধবন্দীকেও রাখা যেত না, ঠিক একই কারণে। শেষমেশ চারটি জাহাজ নিজের দখলে রাখে দস্যু-সর্দার। আর এসব জাহাজে সদস্য হয় চার’শ জলদস্যু।
চার’শ দস্যুর নেতা হতেই সুন্দর ফন্দি এল ব্ল্যাকবিয়ার্ডের মাথায়। চার্লস টাউনের উপকূল থেকে কিছু দূরে ফাঁদ পাতল সে। বন্দর থেকে বেরিয়ে আসা অনেকগুলো জাহাজে মুহুর্মুহু আক্রমণ চালিয়ে বন্দী করল কয়েকজন নোবেলম্যানকে। শহরে হুমকি পাঠাল, মুক্তিপণ না দিলে প্রতি রাতে একজন করে খুন করবে। বিপাকে পড়ে নতি স্বীকার করল হর্তাকর্তারা। ফলস্বরূপ মুক্তিপণ জমতে শুরু করল ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ভাণ্ডারে। সেসব মুক্তিপণ সবসময় যে টাকাকড়ি হত তা না, বরং ওষুধপত্রও আসত মুক্তিপণ বাবদ।
এরপর ব্ল্যাকবিয়ার্ড সরতে শুরু করে ওই অঞ্চল থেকে। টপসেইল ইনলেটের কাছাকাছি এসে ‘কুইন অ্যান’স রিভেঞ্জ’ সমুদ্রতলের পাথরের চাইয়ের সাথে প্রবল বাড়ি খায়। মাস্তুল ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেই ধাক্কা সামালতে না পেরে। ব্ল্যাকবিয়ার্ড বুঝতে পারে এ যাত্রায় আর রক্ষা নেই! তাই কৌশলে কিছু বিশ্বস্ত সঙ্গীকে দিয়ে জাহাজের সমস্ত সম্পদ ছোট্ট একটা জাহাজে তুলতে শুরু করে। এসময় কিছু প্রতিবাদ মাথা তুলতে চাইলে তাও দমন করে দস্যুসর্দার। ব্ল্যাকবিয়ার্ড জানত সবাইকে সাথে করে আর বেশিদিন চলতে পারবে না সে। কারণ ৪০০ মানুষের মাঝে সম্পদের বাটোয়ারা করতে গেলে পরিস্থিতি ল্যাজেগোবরে হয়ে যাবে। তাই বিশ্বস্ত কয়েকজনকে সম্পদ ভর্তি জাহাজে নিয়ে কেটে পড়ল এক সুযোগে। বাকিদের ফেলে গেল পিছে।
ব্ল্যাকবিয়াকার্ড ওকরাকোক আইল্যান্ডে ঘাঁটি গাড়ল দলটা নিয়ে।
আর দশটা জলদস্যুর মত ব্ল্যাকবিয়ার্ডের মাথার দাম তুলেছিল বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ এবং ধনীগোস্টী। সেই দামও নেহাত কম ছিল না! বাউণ্টি, ব্ল্যাকবিয়ার্ডের সম্পদ এবং সম্মানের লোভে পড়ে দস্যু নিধনের স্বপ্ন দেখল তৎকালীন ভার্জিনিয়ার গভর্নর, আলেকজেণ্ডার স্পন্সউড। লিউটেনেণ্ট রবার্ট মেনার্ডকে কমাণ্ডার করে তৈরি করল সামরিক নৌ-দল।
অসীম সাহসী মেনার্ড। অকুতোভয় দল নিয়ে এগিয়ে গেল ওকরাকোক আইল্যান্ডের দিকে। কাছাকাছি পৌঁছে, রেঞ্জার এবং জেইন নামের দুটো ছোট জাহাজকে নিয়ে নামল তদন্তে। বিষয়টা নরজ এড়াল না ব্ল্যাকবিয়ার্ডের। বীর দর্পে ঝাঁপিয়ে পড়ল সেও। আর পড়বে না-ই বা কেন? শত্রুর জাহাজ দুটো হলেও সেখানে কামান নেই। অথচ ব্ল্যাকবিয়ার্ডের জাহাজে রয়েছে আটটি বিধ্বংসী কামান, দক্ষ রক্তপিপাসু খুনি দস্যুদল। তাছাড়া সমুদ্রের স্রোত সর্দারের বড় চেনা। হারার কোনও সম্ভাবনাই দেখতে পেল না সে। উল্লাসের সাথে লেগে গেল লড়াইয়ে।
টানা চলল লড়াই। বন্দুক আর সৈন্যে মেনার্ডের শক্তি ব্ল্যাকবিয়ার্ডের প্রায় দ্বিগুণ। তবুও কষ্ট হচ্ছে লড়াইয়ে। কামানের আঘাতে উড়ে আহত হচ্ছে অনেকেই। কৌশলী হলো মেনার্ড। দলের অন্যদের চুপচাপ লুটিয়ে পড়ার নির্দেশ দিল। ব্ল্যাকবিয়ার্ড ভাবল শত্রু মরে ভূত হয়েছে। সে জাহাজ কাছে নিয়ে উঠেতে শুরু করল মেনার্ডের জাহাজে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ড জলদস্যু দল নিয়ে উঠতেই এক ঝটকায় সচেতন হলো সৈন্যরা। ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলল অনেক জলদস্যুকে। মুখোমুখী লড়াই হলো মেনার্ড আর ব্ল্যাকবিয়ার্ডের। দুজনেই গুলি ছুঁড়ল। কিন্তু মাতাল থাকায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো ব্ল্যাকবিয়ার্ডের গুলি। মেনার্ডের গুলি বুকে নিয়েও লড়ল সে। ভেঙ্গে ফেলল প্রতিপক্ষের তলোয়ার। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। পেছন থেকে এক শত্রু নাবিক এসে কোপ বসাল ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ঘাড়ে। দস্যুচিত মৃত্যু উপহার পেল ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকবিয়ার্ড।
মরার পর ব্ল্যাকবিয়ার্ডের মাথাটা কেটে জাহাজের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছিল রবার্ট মেনার্ড। যাতে ভবিষ্যতের জলদস্যুরা ভয়ে শিউড়ে ওঠে। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের টানা দুই বছর (১৭১৭-১৭১৮) ত্রাসের সমাপ্তি ঘটে সেখানেই।
জলদস্যু ব্ল্যাকবিয়ার্ড সম্পর্কে অনেক গুজব রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো, তার ধরহীন লাশ পানিতে ফেলে দেবার পরে সেটা নাকি শত্রুদের জাহাজ সাঁতার কেটে তিনবার চক্কর দিয়েছিল। শোনা যায়, নিজের কর্মকাণ্ড ব্ল্যাকবিয়ার্ড নিজে লিপিবদ্ধ করেছে। এও কথিত আছে, বিপুল গুপ্তধন কোথাও একটা লুকিয়ে রেখেছে ব্ল্যাকবিয়ার্ড। তবে এসব গুজব খুব একটা সত্যি নয়। ব্ল্যাকবিয়ার্ড নিথর হয়ে যাবার পরেই তার লাশ পানিতে ফেলা হয়েছিল, সুতরাং সে সাঁতার কাটতে পারবে না কিছুতেই।
লেখাপড়া জানলেও কোনও দিনলিপি লেখেনি ব্ল্যাকবিয়ার্ড, বরং তার সম্পর্কে যারা লিখেছে তাদের অতিকল্পনাই তাকে লেখক তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। আর গুপ্তধন বলতে সেসময় ছিল চিনি, কোকো, ইত্যাদি। ধন সম্পদ সেভাবে জমাতে পছন্দ করতো না জলদস্যুরা, সেগুলো পাওয়া মাত্রই যেনতেন ভাবে উড়িয়ে দিত। সুতরাং সেসব জিনিশ যদি লুকিয়েও থাকে, আজকের দিনে সেসবের তেমন কোনও মূল্য নেই। ব্ল্যাকবিয়ার্ড আজকের দিনেও নিঃসন্দেহে সমুদ্রের অন্যতম ত্রাস নামে সুপরিচিত। বিভিন্ন সিনেমা এবং গল্পে বহুবার বহু আঙ্গিকে উঠে এসেছে তার রেফারেন্স। এবং সেসব জনৈক দস্যুকে করে তুলেছে একছত্র কিংবদন্তী। পৃথিবীর ইতিহাসে চিরতরে লেখা হয়ে গেছে এই নাম। যতদিন জলরাশির আতংকের কথা মানুষ স্মরণ করবে, ততদিন স্মৃতিতে বেঁচে থাকবে জলদস্যু ব্ল্যাকবিয়ার্ড।
লিখেছেন প্রান্তঘোষ দস্তিদার
This is a Bengali language article about Blackbeard
- All free image used from internet.