প্লট আর্কিটাইপ পর্ব ১ লিখেছেন- আশরাফুল সুমন
প্লট আর্কিটাইপ—পর্ব ১
যারা নিয়মিত গল্প পড়েন বা টিভি নাটক কিংবা মুভি দেখেন, তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে প্রায়ই একাধিক মুভি/নাটক/বইয়ে একই ধরনের কিছু ব্যাপার খেয়াল করা যায়, সোজা বাংলায় গল্পগুলোতে ‘মিল’ পাওয়া যায়। নায়ক-নায়িকা পরস্পরকে পছন্দ করে কিন্তু পরিবার তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, এমনটা কত শতবার দেখেছেন? আবার, স্লামডগ মিলিয়নিয়ারে যেমন দরিদ্র পরিবারের সন্তান গরিব থেকে ধনী হয়, তেমনি আলাদিনেও প্রধান চরিত্র রাস্তা থেকে উঠে এসে রাজ্যের রাজকন্যাকে বিয়ে করে ধনী হয়ে যায়। পার্সি জ্যাকসনে যেমন ‘কিছু একটার’ সন্ধানে থাকে সবাই, তেমনি আমাদের সাম্ভালাতেও ‘কিছু একটার’ সন্ধানে থাকে সবাই। কিছুদিন আগে বের হওয়া ‘রেড নোটিস’ নামের মুভিটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু খুব সুরক্ষিত স্থান থেকে চুরি করার কাহিনি নিয়ে, তেমনি মিস্টবর্নও তাই নিয়ে আবার হিন্দি মুভি হ্যাপি নিউ ইয়ার আর ধুমও তাই নিয়ে। তবে কি এরা একজন আরেকজনের খাতা দেখে টুকলিফাই করেছে?
না। এই মিল এতই স্বাভাবিক যে আপনি যেই গল্প/নাটক/মুভিই দেখেন না কেন, সেটার সাথে অতীতের বা সমসাময়িকের অনেকগুলো কাজেরই কোথাও-না-কোথাও কিছু-না-কিছু মিল খুঁজে পাবেনই। ঐটে দেখেই ‘কপিবাজ শালা’ বলে চিৎকার করার প্রয়োজন নেই। কারণ সাহিত্যের ভাষায় এদের যে নাম আছে একটা। আর এগুলোকেই বলা হয় প্লট আর্কিটাইপ। মানে প্লটের ছাঁচ, মূল নকশা, মূল বস্তু। অবশ্য, এই আর্কিটাইপ শুধু প্লটেরই না, হতে পারে চরিত্রের, প্রতীকের বা সেটিং-এর। সহজ কথা হলো, এই আর্কিটাইপগুলো ঘুরেফিরে সব গল্পেই আসে। মিলিয়ন মিলিয়ন গল্পে আপনি ডাম্বলডোরের মতো চরিত্র পাবেন যে প্রধান চরিত্রকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়। এরা হলো চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে মেন্টর আর্কিটাইপ। আবার মিলিয়ন মিলিয়ন গল্পে আপনি ডার্ক লর্ডকে পাবেন, কখনো সাউরানের রূপে, কখনো ভোলডেমর্টের রূপে কখনো বা ভ্যালেন্টাইনের রূপে। এগুলো সবই ক্যারেক্টার আর্কিটাইপ।
আজকের আলোচনা প্লট আর্কিটাইপ নিয়ে, তাই অন্য সব আর্কিটাইপের দিকে আর যাচ্ছি না।
লিটারারি থিয়োরিস্ট ক্রিস্টোফার বুকার তার বইতে সাতটি মৌলিক প্লট আর্কিটাইপের কথা উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এগুলো এতই মৌলিক যে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যেকোনো গল্প/ড্রামায় ঘুরেফিরে এরাই এসেছে, তা সে যেভাবেই হোক। সেগুলো কী? চলুন, ঘুরে আসি প্লট আর্কিটাইপের জগৎ থেকে।
১। র্যাগস টু রিচেস:
এই ধরনের গল্পে বিভিন্ন পর্যায়ের সংগ্রাম শেষে প্রধান চরিত্র এমন কিছু অর্জন করে যেটার তার অভাব ছিলো এককালে—টাকা-পয়সা, প্রেম, ক্ষমতা, খ্যাতি ইত্যাদি। হয়তো গল্পের শুরুতে সে থাকে দরিদ্র, তারপর বিভিন্ন ধরনের সংগ্রাম শেষে বিত্তশালী হয়। অথবা প্রথমে ধনী থাকে, এরপর সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়, আর তারপর ঘটনাচক্রে সবকিছু ফিরে পায় বা দরিদ্র থেকে ধনী হয়ে যায়। উদাহরণ দিতে গেলে প্রথমে ডিজনির কথা বলতে হয়। ডিজনির অন্যতম প্রিয় প্লট আর্কিটাইপ হলো র্যাগস টু রিচেস। যেমন, আলাদিন, সিন্ডারেলা, দ্য প্রিন্সেস অ্যান্ড দ্য ফ্রগ। এর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হলো আলাদিন। র্যাগস টু রিচেস-এর পাঁচটা ধাপ ব্যাখ্যা করার জন্য প্রায়ই আলাদিনের বিভিন্ন দৃশ্যের উদাহরণ দেওয়া হয়। তবে আমি আলোচনা সহজ রাখছি, তাই পাঁচ ধাপের গভীরে ঢুকছি না।
উপরেরগুলোর বাইরে যদি বলি, তাও অনেক উদাহরণ আছে হাতের কাছেই। স্লামডগ মিলিয়নিয়ার, ডেভিড কপারফিল্ড, দ্য আগলি ডাকলিং, হেরা ফেরি।
বিখ্যাত হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম বইতে শুরুতে হ্যারি ছিলো একজন অনাথ বালক, যে তার আংকেল-আন্টির ঘরে সিঁড়ির নিচের ছোট্ট কাপবোর্ডে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তার নেই কোনো বন্ধু, নেই টাকা-পয়সা, নেই ক্ষমতা, নেই কোনো ভালোবাসা। আর তারপর সে একদিন একটা চিঠি পায়। চিঠিতে লেখা, সে একজন জাদুকর, ঠিক তার বাবা-মায়ের মতোই। আর তাই সেই জাদুর স্কুলে তার জন্য একটি স্থান রাখা আছে। শীঘ্রই সে জানতে পারে, মানুষের জগতে একজন ‘র্যাগস’ হলেও জাদুকরদের জগতে সে খুবই খুবই বিখ্যাত একজন। গল্পের এইটুকু অংশ র্যাগস টু রিচেস।
তবে র্যাগস টু রিচেস মানে যে শুধু টাকা-পয়সা পেয়ে বড়লোক হয়ে যাওয়া, তা না। প্রধান চরিত্রের জীবনে কখনো প্রেম আসেনি, মেয়েরা ওকে দেখলে ‘ধুর শালা, কোথায় আগরতলা আর কোথায় জুতার তলা’ বলে অপমান করে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। বা হয়তো সে তার ‘ওয়ান ট্রু লাভ’-এর সন্ধানে আছে। গল্পের বিভিন্ন সংগ্রাম শেষে অবশেষে যদি সে তার প্রেম খুঁজে পায়, তবে সেটাও র্যাগস টু রিচেস। নায়ক আর নায়িকার শুরুতে দুষ্টু-দুষ্টু প্রেম, তারপর বিচ্ছেদ, এরপর অনেক সংগ্রামের পর আবারো প্রেম ফিরে পাওয়া—এটাও একই আর্কিটাইপ। আবার, আপনার প্রধান চরিত্র একজন রাজা, তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রাজ্যছাড়া করা হয়েছে। সে এখন একজন র্যাগস। আর সে যদি আবার তার রাজ্য ফিরে পায় তো সেটা র্যাগস টু রিচেস।
ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা কেউ পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পাওয়াটাও এই শ্রেণিতে পড়ে। থরের আহ্বানে মিয়লনিয়ের সাড়া দিচ্ছে না। সেই দুঃখে অসহায়, অক্ষম থরও একজন র্যাগস। আর অবশেষে নিজেকে ‘ওর্দি’ প্রমাণ করে যখন সে মিয়লনিয়ের ফিরে পায়, তখন সেটাও র্যাগস টু রিচেস।
রিক রাইঅর্ডেনের নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার সিরিজ ‘দ্য ট্রায়ালস অব এপোলো’-তে মাউন্ট অলিম্পাসের রাজা জিউস তার ছেলে দেবতা এপোলোর উপর ক্ষেপে গিয়ে তার সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেয়। তাকে ছুঁড়ে ফেলে মানুষের জগতে। এপোলো পরিণত হয়ে লেস্টার পাপাডোপোলাস নামের একজন পেটমোটা, বদখত তরুণে, যার গায়ে একটা ঘুসি মারার মতো জোরও নেই (এপোলোর মতে, মাউন্ট অলিম্পাসের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং গডকে এইভাবে অপমান করার অধিকার কারো নেই)। এপোলোকে কিছু ‘ট্রায়াল’ সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে জিউসের কাছে নিজেকে ‘যোগ্য’ প্রমাণ করতে হবে, আর তা করলেই সে ফিরে পাবে তার দেবত্ব। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, এটাও র্যাগস টু রিচেস।
একজন মিউজিশিয়ান চায় তাকে দুনিয়ার সবাই চিনুক। যদিও সে যথেষ্ট ভালো গান করে, কিন্তু তার অডিয়েন্স তার বন্ধুবান্ধব আর পাড়ার লোকদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সে বিখ্যাত হতে চায়, আর সেজন্য প্রচুর শ্রম দেওয়া শুরু করে। তারপর যখন সে অবশেষে বিশ্বমঞ্চে চলে যায়, তখন সেটা র্যাগস টু রিচেস।
২। ওভারকামিং দ্য মনস্টার:
এই ধরনের গল্পে প্রধান চরিত্রকে কোনো একটা দানবের মোকাবেলা করে তাকে হারাতে হয়। মনে রাখতে হবে, এই দানব আক্ষরিক কিংবা ভাবার্থক, দুই রকমই হতে পারে। হবিট ট্রিলজিতে শুরুতে যেমন স্মাগ নামের সেই ড্রাগনকে হারাতে হয়। পার্সি জ্যাকসনে যেমন টাইটান ক্রোনোসকে হারাতে হয়। দেশীয় গল্পের ক্ষেত্রে পাপপিঞ্জর আর আর্কনের কথা বলা যায়। পাপপিঞ্জরে সেই জিনের মুখোমুখি হতে হয়। আর্কনে সেই ‘আর্কন’-এর মোকাবেলা করতে হয়।
আবার এই মনস্টার সরাসরি দানব না হয়ে শক্তিশালী জাদুকর বা ডার্ক লর্ডও হতে পারে। লর্ড অব দ্য রিংসে যেমন সাউরনকে হারিয়ে পৃথিবীকে বাঁচাতে হয়। হ্যারি পটারে যেমন লর্ড ভোল্ডেমর্টকে হারিয়ে পৃথিবীকে রক্ষা করতে হয়।
ওভারকামিং দ্য মনস্টারের প্রধান আকর্ষণ হলো সেই ‘দানব’। আর এই ‘দানব’ যেমন ফ্যান্টাসি ‘মনস্টার’ হতে পারে, তেমনি হতে পারে কোনো ডার্ক লর্ড, থ্রিলার গল্পের ক্ষেত্রে ড্রাগ লর্ড, সামাজিক গল্পের ক্ষেত্রে কোনো অসৎ চরিত্রের বস, রোমান্টিক গল্পের ক্ষেত্রে ‘তোমার-আমার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সেই অত্যাচারী, একগুঁয়ে পিতা’। সোজা কথায়, আপনার গল্পের ভিলেন, যার মধ্যে একজন মনস্টার বাস করে।
এবার ফ্যান্টাসি বাদ দিয়ে বাস্তব জগতের দিকে আসুন। প্রধান চরিত্রের অফিসের বস যদি চরিত্রহীন হয়, তবে সেও একজন মনস্টার। আপনার প্রটাগনিস্ট হয়তো একজন নারী, আর তাকে বসের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার সহ্য করেও চাকরি করতে হয়। আর এতসব কিছুর পরেও সে কীভাবে সবার কাছে বসের আসল চেহারা তুলে ধরে, নিজে ফায়ার হওয়ার বদলে বসকেই কীভাবে কোম্পানি থেকে ফায়ার করিয়ে ছাড়ে, এটাই ওভারকামিং দ্য মনস্টার। অফিসের দুষ্টু সহকর্মী আপনার সাথে জঘন্য অফিস পলিটিক্স খেলছে? মনস্টার। থ্রিলার গল্পের ড্রাগ লর্ড? মনস্টার। যুদ্ধের গল্পে বিপক্ষ দলের নিষ্ঠুরতায় হিটলারের যোগ্য সেনানায়ক? মনস্টার। দেশীয় গল্পের ক্ষেত্রে ‘প্রহেলিকা’-র কথা বলা যায়। সেখানে যে সাইকোপ্যাথ শিশুদের নৃশংসভাবে খুন করে সে একজন মনস্টার। আবার, ‘ঋ’ উপন্যাসের সাইকোপ্যাথও একজন মনস্টার।
এই মনস্টার যেমন বাহ্যিক হতে পারে, তেমনই হতে পারে অভ্যন্তরীণও। তার দৈহিক রূপ থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে। সে হতে পারে কেবলই একটা অক্ষমতা, একটা অনুভূতি, যা আপনার চরিত্রকে পেছন দিকে টেনে ধরছে। আপনার প্রধান চরিত্রের ভেতরে কোনো একটা অসুস্থতা আছে। বা হয়তো সে মাদকাসক্ত। এই অসুস্থতা বা এই মাদক নামের দানবকে হারিয়ে তার জয়ী হওয়ার বা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার গল্পই হলো ওভারকামিং দ্য মনস্টার।
আবার, এই মনস্টার হতে পারে কোনো মানবিক ত্রুটি, অথবা অনুভূতি, ভয়। আপনার প্রটাগনিস্ট খুবই ‘অকওয়ার্ড’, খুবই অসামাজিক, খুবই ইন্ট্রোভার্ট। আর তার এই ভয় আর সীমাবদ্ধতা তাকে পেছনে টেনে ধরে রাখছে। সে খুব ভালো গান গায়, কিন্তু স্টেজে ওঠা তো দূরে থাক, স্টেজে ওঠার কথা ভাবলেই তার শরীর কাঁপতে শুরু করে। আর তাই সে তার প্রতিভার কথা সবাইকে জানাতে পারছে না। এই ভয় নামের দানবকে জয় করে সে কীভাবে সফল হয়, সেই গল্পটাই ওভারকামিং দ্য মনস্টার।
৩। কোয়েস্ট:
প্রোটাগনিস্টকে কিছু একটার সন্ধানে কোনো অভিযানে যেতে হয়, তারপর বেশ কিছু বাধা-বিপত্তির মোকাবেলা করে সে ওটার সন্ধান পায়। ফ্যান্টাসি এবং অ্যাডভেঞ্চার জনরার কমন প্লট আর্কিটাইপ। তবে অন্য জনরাতেও এর ভূরিভূরি উদাহরণ আছে। লর্ড অব দ্য রিংস, হবিট, হ্যারি পটার, ফাইন্ডিং নিমো, পার্সি জ্যাকসন, ম্যাগনাস চেইস, ট্রেজার আইল্যান্ড এই জাতীয় গল্পের উদাহরণ। দেশীয় ফ্যান্টাসিতে সাম্ভালা আর থ্রিলারে ব্ল্যাক বুদ্ধা।
এই কোয়েস্ট জাতীয় গল্পে সাধারণত প্রটাগনিস্ট একা অভিযানে যায় না, তার সাথে আরো এক বা একাধিক চরিত্র যায়। এই চরিত্রগুলো নিচের চারটা ক্যাটাগরির যেকোনো একটাতে পড়ে।
ক) প্রটাগনিস্টের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হ্যারি পটারের ক্ষেত্রে রন-হারমায়ানি। শার্লক হোমসের ক্ষেত্রে ডক্টর ওয়াটসন। লর্ড অব দ্য রিংসে স্যামওয়াইজ গ্যামজি।
খ) সাইডকিক। এরা মূল চরিত্রের আশেপাশেই থাকে, তার সাথে বিভিন্ন অভিযানে যায়, তার সাথে একত্রে লড়াই করে, তাকে রক্ষা করে। এরা একই সাথে প্রধান চরিত্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও হতে পারে। উপরের উদাহরণগুলো এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর বাইরে ব্যাটম্যানের ক্ষেত্রে রবিন। এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ-এর পাসোপার্তু। পাসোপার্তু কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড না, প্রধান চরিত্রের অধীনে কাজ করতো। তার মানে, সাইডকিক বেস্ট ফ্রেন্ড হতেও পারে, নাও পারে।
এখানে আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো। সাইডকিক হতে হয় প্রটাগনিস্টের বিপরীত। মানে হলো, সাইডকিকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা, শারীরিক আকৃতি, মানসিকতা হতে হয় প্রধান চরিত্রের বিপরীত। এটা কেন করা হয়? এটা করা হয় প্রধান চরিত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা, আকার-আকৃতি, মানসিকতার সম্পূর্ণ বিপরীত কাউকে তার পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে তার ঐ নির্দিষ্ট দোষ-গুণগুলোকে আরো ভালো করে নজরে আনানোর জন্য। এই যে বিপরীত কোনো কিছুকে পাশাপাশি রেখে নির্দিষ্ট কারো উপর ফোকাস নিয়ে আসা, এটাকে বলা হয় জাক্সটাপোজিশন। এই লিটারারি ডিভাইস যেমন চরিত্রের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে, তেমনি বাক্যের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর সম্পর্কে লিটারারি ডিভাইস-সংক্রান্ত আলোচনায় বলবো।
গ) হিরোর অভিযানে সাহায্য করার জন্য নাম-গোত্রহীন একদল লোক। এদের নাম-ধাম জানা নাও থাকতে পারে। এদের কাজ হলো লড়াইয়ের সময় সংখ্যাবৃদ্ধি করা আর জায়গামতো মরে-টরে গিয়ে সেন্স অব ডার্কনেস যোগ করা।
ঘ) হিরোর সাথে আরো কিছু লোক থাকে যাদের নিজস্ব পরিচয় আছে, বৈশিষ্ট্য আছে, ক্ষমতা আছে। এরা মোটেও যে-সে না। এদের বুদ্ধি, যোগ্যতা, দক্ষতা আছে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। ফেলোশিপ অব দ্য রিং-এ গিমলি, লেগোলাস, বোরেমির হলো এই গোত্রীয়।
আজ এইটুকুই। পরের পর্বে থাকবে কমেডি এবং ট্র্যাজেডি আর্কিটাইপ নিয়ে আলোচনা। সে পর্যন্ত বিদায়।