দ্য দা ভিঞ্চি কোড- ড্যান ব্রাউন- রিভিউ

তারিখ:

পোস্ট শেয়ার করুন:

দ্য দা ভিঞ্চি কোড- ড্যান ব্রাউন- রিভিউ

বই: দ্য দা ভিঞ্চি কোড

লেখক: ড্যান ব্রাউন

জনরা: থ্রিলার

দ্য দা ভিঞ্চি কোড ড্যান ব্রাউনের কালজয়ী সাহিত্যের মধ্যে একটি। এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার বই। যদিও বইটি রবার্ট ল্যাংডন সিরিজের দ্বিতীয় বই। সিরিজের প্রথম বইটি ছিল এঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস। কিন্তু, জনপ্রিয়তার দিক থেকে দ্য দা ভিঞ্চি কোডই অধিক জনপ্রিয়।

কাহিনী সংক্ষেপ:

প্যারিসের লুভ্যর মিউজিয়ামের কিউরেটর জ্যাক সনিয়ের আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে টলতে টলতে এক কোণার পড়ে গেলেন। আততায়ী তাকে সাবধান করে দিয়ে কোনো এক গোপন ব্যাপারে জানতে চেয়ে বললেন, ‘আপনার এবং আপনার ভাইদের কাছে এমন কিছু আছে, যা আপনাদের নয়।’

জ্যাক সনিয়ের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বেয়ে গেল। তিনি বুঝতে পারলেন না, এই গোপন কথাটা এই ব্যাক্তি কীভাবে জানল! তিনি নিজেকে বাঁচাতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বললেন, যা তার আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। কিন্তু, আততায়ী একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে বললেন, ‘আপনার বাকী তিনজন অনুচারীও একই গল্প বলেছে। এখন আপনি সত্যিটা বলবেন। কেননা, আপনার মৃত্যুর পরে একমাত্র আমিই হতে যাচ্ছি যে এই সত্যিটা জানবে।’

কিন্তু, জ্যাক সনিয়ের সত্যিটা না বলায় আততায়ী তাকে পেটে গুলি করলেন। তিনি নিজেকে কোনোক্রমে সামলে নিলেন। তিনি জানতেন, যেখানে গুলি লেগেছে তাতে তিনি মিনিট পনেরো মতো বাঁচবেন। এই সময়ের মধ্যেই তাকে এই গোপন কথাটা কাউকে না কাউকে জানিয়ে যেতে হবে। কিন্তু, মিউজিয়ামের সিকিউর দরজাগুলো পার হয়ে কেউ আসলেও অন্তত বিশ মিনিটের বেশি সময় লাগবে। তাই, তিনি অন্য উপায় ভেবে বের করলেন। তিনি গ্যালারির দিকে তাকিয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলোর দিকে তীব্র ব্যথা নিয়ে টলতে টলতে এগিয়ে গেলেন।

জ্যাক সনিয়ের মৃত্যুর পূর্বে লিখে রেখে গেলেন একটি ধাঁধা সাথে লিখে রেখে গেছেন একটি নাম- রবার্ট ল্যাংডন। প্রফেসর ল্যাংডন হলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিলিজিয়াস সিম্বোলজি বিভাগের প্রফেসর। যিনি প্রাচীন ধর্মগুলোর সাংকেতিক এবং প্রতীকবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করেন। তাঁর সাথে জ্যাক সনিয়ের দেখা করার এপোয়েন্টমেন্ট থাকলেও, দেখা করার আগেই তিনি খুন হয়ে যান।

কেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্টারপোল পুলিশের ক্যাপ্টেন বেজু ফঁসের নির্দেশে রবার্ট ল্যাংডনকে ঘটনাস্থলে হাজির করা হয়। তিনি গিয়ে দেখেন, জ্যাক সনিয়ের গায়ের সব পোষাক খুলে চিৎ হয়ে ঘরের কারিডরে অক্ষের ঠিক মাঝখান বরাবর শুয়ে আছেন। হাত-পা ঈগল পাখির ডানার মতো ছড়িয়ে আছে। তাঁর গুলিবিদ্ধ স্থানে একটি চিহ্ন আঁকা। হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে নিজেরই রক্ত ব্যবহার করে পেটকে ক্যানভাস বানিয়ে ‘পাঁচটি সরল রেখা দিয়ে একটি পাঁচকোণা তারা’ এঁকেছেন। যা পেন্টাকলের মতো দেখতে। এটি এমন প্রাচীন একটি সিম্বল যা যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও চার হাজার বছর আগে প্রাচীন প্রকৃতি পূজারী ধর্মাবলম্বীরা ব্যবহৃত করত।

সনিয়েরের মৃতদেহের সাথে আরেকটি বস্তু পাওয়া যায় তা হলো একটি বিশেষ ধরনের ব্ল্যাক লাইট কলম। যা অদৃশ্য কিছু লিখতে বা মার্ক করতে ব্যবহার করা হয়। ব্যাপারটা তাঁদের বিস্মিত করে তাই তাঁরা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে ঘরের লাইট বন্ধ করে দেয়। ক্যাপ্টেন ফঁসে একটি আল্ট্রা ভায়োলেট লাইট নিয়ে আসেন যা দিয়ে সাধারণত রক্ত এবং ফরেনসিক এভিডেন্স খুঁজে পেতে ব্যবহার করা হয়।

লাইটটি মৃতদেহের উপরে ফেলতেই সকলে চমকে ওঠে। সনিয়েরের শেষ কিছু কথা মৃত্যুর পূর্বে করিডরে লিখে রেখে গেছেন। সেখানে খুবই বেখাপ্পা একটি বার্তা লেখা ছিল-

13-3-2-21-1-1-8-5

Oh, Draconian devil!

O’ Lame saint!

প্রথমে মনে হলো এটা হয়তো খুনির পরিচয়। হয়তো টেলিফোন নম্বর, বাড়ির অ্যাড্রেস বা সোসিয়াল আইডি নম্বর হয়ে থাকবে। কিন্তু, ঘুণাক্ষরেও কেউ বুঝতে পারেনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সিক্রেটের খোলাসা ছিল এই লেখাটির মধ্যেই। কিন্তু, ধাঁধা এখানেই শেষ নয়! সনিয়েরের চারপাশে আরও একটি চিহ্ন আঁকা আছে। আসলে সনিয়েরের দেহটি একটি বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ করা ছিল। অর্থাৎ, বৃত্তের মধ্যে ইগলের মতো হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকা নগ্ন একজন মানুষ। যা ঠিক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘ভিটরুভিয়ান ম্যান’ এর মতো!

রবার্ট ল্যাংডন ধাঁধার ব্যাখ্যা করার আগেই আগমন ঘটে ফরাসি পুলিশ ডিসিপিজির দক্ষ কোড ব্রেকার সোফি রিভ্যুর। যে কৌশলে ল্যাংডনকে সাবধান করে দেয় যে তিনি বিপদে আছেন। সাথে সোফি সবাইকে বোঝায় সনিয়েরের লিখে যাওয়া ধাঁধাটি আসলে একটি গাণিতিক সমীকরণ। সংখ্যাগুলো ছোটো থেকে বড়ো ক্রমে সাজালে আসে, ১-১-২-৩-৫-৮-১৩-২১ অর্থাৎ এটি বিখ্যাত ফেবুনাচ্চি সংখ্যাক্রম। সোফি বোঝাল, এটি এমন একটি সংখ্যাক্রম যার দুটি সংখ্যার যোগফল তৃতীয় সংখ্যার সমান।

কিন্তু, এরচেয়েও বড়ো বিস্ময় ল্যাংডনের জন্য অপেক্ষা করছিল। সোফির কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন তাঁকে এখানে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে না, বরং সন্দেহভাজন হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। সেইসাথে সোফি এটাও জানায় সে আসলে সনিয়েরের আপন নাতনী, যা কেউ জানে না! তাদের এক্ষুনি এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া উচিত। তানাহলে ক্যাপ্টেন ফঁস তাকে গ্রেফতার করবে। আর এই সিক্রেটের সত্যতা উদঘাটনে সোফির ল্যাংডনকে প্রয়োজন। তাই, দুজনে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। 

এই শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলারের মূল থ্রিল শুরু হয় এখান থেকেই। ল্যাংডন এবং সোফি রহস্য উদঘাটনে একেরপর এক ক্লু পেতে থাকে- নামের মধ্যে, সোফির ছোটবেলার খেলা ও খেলনার মধ্যে। এরই মধ্যে ল্যাংডন মৃতদেহের পাশের সেই লেখা থেকে একটি নতুন ক্লু খুঁজে পায়।

Oh, Draconian devil!

O’ Lame saint!

যা সঠিকভাবে সাজালে নিখুঁত একটি এনাগ্রাম পাওয়া যায়। যা হলো-

Leonardo Da vinci  

The Mona Lisa

তারা বুঝে ফেলে রহস্যের প্রথম গিঁট এই চিত্রের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। ল্যাংডন এবং সোফি মনালিসার চিত্রটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আবারও গোপনে মিউজিয়ামে ফিরে আসে। চিত্রটির সামনে দাঁড়িয়ে তারা আরও একটি ধাক্কা খায়। মরে যাবার আগে সোফির দাদা সনিয়ের ছবির উপরেও একটি ক্লু রেখে গেছেন-

SO DARK THE CON OF MAN

তারা জানতে পারে, এটি একটি বিশেষ সংঘকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে প্রাইওরি অফ সাইওন নামে একটি গোপন ভাতৃসংঘ গঠিত হয়েছিল। বত্তিচেল্লি, ভিক্টর হুগো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, স্যার আইজ্যাক নিউটনের মতো বাঘা বাঘা ব্যক্তিবর্গ সেই সংঘের অংশ ছিলেন। তাঁরা এমন এক গোপনীয় সত্য জানতেন যা প্রকাশিত হয়ে গেলে পৃথিবীর ধর্মগুলো চরম সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। তাই, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থেকে উনারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সহিত এই সত্যকে গোপন রাখতেন। বংশ পরম্পরায় বর্তমানে পৃথিবীর যে চারজন এই সত্যের কথা জানতেন জ্যাক সনিয়ের তাদের একজন ছিলেন। আর তাই বাকীদের মতো তাঁকেও খুন হতে হয়েছে।

ভিঞ্চি কোড
ছবি- সংগৃহীত

তারা রহস্যের আরও গভীরে ঢুকে গেল। একের পর এক ক্লু নিয়ে তারা এগোতে থাকল। তারা মুখোমুখি হলো এমন সব সত্যের যা হজম করা মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। তারা একসময় একটি কি-স্টোন খুঁজে পায়। যাতে ক্লু দেওয়া থাকে ‘হলি গ্রেইল’ নামক কিছু একটার। যেখানেই খুঁজে পাওয়া যাবে এই গোপন সত্যের। তারা হলি গ্রেইলকে খুঁজে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।

যদিও এক সময় এসবের কলকাঠি নাড়া আসল ব্যক্তির মুখোশ খুলে যায়, ধরা পড়ে যায় কিউরেটরের আসল খুনি; যা ছিল ল্যাংডনের জন্য আরেকটি সাংঘাতিক ব্যাপার। একদিকে ফ্রান্স এবং বৃটিশ পুলিশের তাড়া অন্যদিকে অজানা বিপদ। ল্যাংডন এবং সোফি কীভাবে সার্ভাইব করে? কী ছিল এই হলি গ্রেইল? কীভাবে তারা উন্মোচন করে পৃথিবীর সবচেয়ে সিকিউর সত্যিকে? আর কীইবা ছিল সেই সিক্রেট সত্যি, যার জন্য এত মানুষকে খুন হতে হয়েছে? জানতে আপনাকে পুরো বইটি পড়তে হবে। বইটি পড়ার সময় এমন এক থ্রিলিং জগতে ঢুকে পড়বেন, যেখান থেকে বের হতে আপনার দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। মাথায় ভেতর শুধু ভিঞ্চি কোডই ঘুরপাক খাবে। আর এ জন্যই বইটি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ থ্রিলার উপন্যাসের একটির মর্যাদা পেয়েছে।

ভিঞ্চি কোড
Dan Brown সূত্রঃ GETTY IMAGES

পাঠপ্রতিক্রিয়া:

বিভিন্ন প্রাচীন এজেন্সি এবং তাদের ইনফ্লুয়েনশিয়াল তথ্য যেভাবে ড্যান ব্রাউন লিপিবদ্ধ করেছেন তা সত্যিই হতবাক করে দেবার মতো। বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় গল্পের মোড় ঘুরতে থাকে। ভরপুর টুইস্টে বই থেকে মুখ তোলার উপায় থাকবে না। পাতায় পাতায় বেরিয়ে আসতে থাকবে হাজার হাজার বছর ধরে লুকিয়ে রাখা সত্য। যা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভাবে লুকিয়ে রেখেছিল প্রাইওরি দ্য সাইওন-এর সদস্যরা।

ঘটনা সমূহের এতটা রিয়েলিস্টিক বর্ণনা তিনি করেছেন যে আপনার মনে হবে, প্রফেসর ল্যাংডন এবং সোফির সাথে আপনিও ঘুরে বেড়াচ্ছেন লন্ডন ও প্যারিসের চার্চগুলোতে, ছুটে বেড়াচ্ছেন হোলি গ্রেইলের জন্য। বইটি পড়লে থ্রিলের পাশাপাশি খ্রিষ্টধর্মের ইতিহাস, গোপন সংস্থান, সিম্বোলজি সম্পর্কেও অনেক তথ্য জানতে পারবেন। বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা সম্পর্কেও অজানা অনেক তথ্য জানতে পারবেন বইটি পড়লে।

মন্তব্য:

বইটির অনেকগুলো বাংলা অনুবাদ আছে। বিশেষ করে, শেখ আবদুল হাকিম এবং মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন; এ দুজনের অনুবাদ বেশি পাঠকপ্রিয়। আমি নাজিম উদ্দিনের অনুবাদটি পড়েছি। আমার কাছে এটিই বেশি সাবলীল ও সহজবোধ্য লেগেছে। আপনারা যেকোনোটিই পড়তে পারেন।

গল্পসল্প বুক রিভিউ

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

জুতা (ছোট গল্প)- আফিন্দী

জুতাবিদ্যুৎ’এর গলার তেজে ফাঁকা মেসরুম গমগম করে উঠলো, “ভাই, তুমি যাবে পাঁচ ভাইয়ে? খিদেয় আমার জান যায়! খালা...

মৃত্যু পরবর্তী জগতের অভিজ্ঞতা 

মৃত্যু পরবর্তী জগতের অভিজ্ঞতা  মৃত্যু পরবর্তী জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন? মানুষ তার অনিশ্চিত জীবনে শুধু একটি বিষয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে জন্মেছে।...

বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’

বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের 'মেঘ বলেছে যাব যাব' বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের 'মেঘ বলেছে যাব যাব'।বইয়ের নাম:মেঘ বলেছে যাব...

ডা. স্যাটান: সিরিয়াল কিলার ডা. মার্সেল পেটিওটের ভয়ংকর গল্প!

তাকে আখ্যা দেয়া হয়েছিল ডা. স্যাটান বলে। তিনি একই সাথে একজন সৈনিক, ডাক্তার, মেয়র, ভয়ঙ্কর অপরাধী এবং সিরিয়াল...