এ টাইম টু ডাই- উইলবার স্মিথ- রিভিউ

তারিখ:

পোস্ট শেয়ার করুন:

এ টাইম টু ডাই- উইলবার স্মিথ- রিভিউ

বই: এ টাইম টু ডাই

জনরা: অ্যাডভেঞ্চার

লেখক: উইলবার স্মিথ

অনুবাদ: মখদুম আহমেদ

উইলবার স্মিথ
এ টাইম টুঁ ডাই- উইলবার স্মিথ সূত্রঃ https://www.wilbursmithbooks.com/

‘এ টাইম টু ডাই’ উইলবার স্মিথের অন্যতম সেরা একটি সাহিত্য কর্ম। এরকম গা ছমছমে, সাসপেন্স, প্রতি মূহুর্তে থ্রিল যুক্ত অ্যাডভেঞ্চার খুব কমই আছে। সারা বিশ্বের বেস্ট সেলিং উপন্যাসের মধ্যে এটি অন্যতম। আজ আমরা এই বইটি নিয়ে আলোচনা করব।

গল্পের শুরুটা হয় শন কর্টোনি, রিকার্ডো মনটেরো এবং তার মেয়ে ক্লডিয়াকে নিয়ে। প্রথমেই পরিচয় গুলো জেনে নেওয়া যাক,

শন কর্টোনি একজন যোদ্ধা, দক্ষ এবং প্রফেশনাল শিকারী। অ্যাডভেঞ্চারের জন্যই যার জন্ম। সে একটি কন্সেশন চালায় যার প্রধান কাজ হচ্ছে ক্লায়েন্টের শিকারের জন্য সকল অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া এবং শিকারে সাহায্য করা।

রিকার্ডো মন্টেরো (ক্যাপো) একজন বয়স্ক মানুষ। সারাজীবন তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তাকে অনেক ভাবেই বিশেষায়িত করা যায়। তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাথলেট, শিকারী এবং বিশাল ধনকুবের। শিকার তার অন্যতম নেশা।

ক্লডিয়া হলো রিকার্ডো মন্টেরোর মেয়ে। ছাব্বিশ বছর বয়সী অবিবাহিত যুবতী। অসম্ভব সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে তার বাবার আদর্শের পরিপন্থী। বাবার কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী। বাবার রুচি-ধ্যানধারণা-বিচার বিবেচনার একেবারে বিপরীত সে। স্বাধীনচেতা, আবেগী এবং কোমলতায় পরিপূর্ণ। এমনকি সে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা না করে মাত্র বাৎসরিক চল্লিশ হাজার ডলারের চাকরি করে নিজের খরচ চালায়। 

এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কমরেড চায়না। ইনিই গল্পের মূল ভিলেন।

এবার উপন্যাসের মূল কাহিনীতে আসা যাক:

কাহিনী শুরু হয় আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে শিকারকে কেন্দ্র করে। আফ্রিকার বৃহত্তর সিংহ ‘ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট’ কে শিকার করা তাদের মূল লক্ষ্য। ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট দানবাকৃতির একটি সিংহ যার জলহস্তির মতো মাথা, প্রায় এগারো ফুটের বেশি লম্বা, কালো মেঘের মতো কেশর। পূর্বে অনেকে চেষ্টা করেও তাকে শিকার করতে পারেনি। সে এতটাই চতুর এবং কৌশলী যে তিনবার গুলি করার পরেও সে বেঁচে গিয়েছে।

রিকার্ডো মন্টেরো জীবনের শেষ শিকার হিসেবে এই সিংহ শিকার করতে চান। আর তাই তিনি শন কর্টোনিকে হায়ার করেছেন। তাই শিকারের জন্য অপেক্ষারত বসে আছে শন, রিকার্ডো এবং ক্লডিয়া। শিকার করা ক্লডিয়ার কাছে ঘৃণ্য এবং নৃশংস কাজ। তবুও বাধ্য হয়ে সে বাবার সাথে এসেছে কেননা আর কখনো বাবার সাথে শিকারে যাবার সুযোগ সে পাবে না। কিন্তু, শিকারে আসার পরে সে বুঝে ফেলে তার বাবার চাইতেও বর্বর আরেকজন মানুষ হলেন শন কর্টোনি। যে নিষ্ঠুর, দয়াহীন একজন মানুষ। ক্লডিয়া তাকে একেবারেই পছন্দ করে না, তবুও তার প্রতি একধরনের আকর্ষণ কাজ করে যা নিয়ে নিজের প্রতিই সে বিরক্ত।

যাইহোক, তারা শিকারের জন্য ঘন ঝোপের আড়ালে দীর্ঘক্ষণ প্রতিক্ষায় ছিল। টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি মেষের পা যা গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেটের বদলে মাংসের গন্ধে চলে আসে তিনটে বাচ্চাসহ একটি বুড়ো মা সিংহী। সিংহীটি টোপের মাংস খেতে শুরু করে। কিন্তু, তাদের কিছু করার ছিল না কেননা মা সিংহী মারা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ নিষেধ অমান্য করলে তার লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি জেল, জরিমানাও হতে পারে।

কিন্তু, সিংহীটি ওদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায় এবং আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। একটি গা ছমছমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শন বুদ্ধি করে ফাঁকা গুলি করে সিংহীটিকে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু, সিংহীটি গাছের পেছনে লুকিয়ে বসে ছিল। শন সবাইকে সাবধান করে দেয় কেউ যেন দৌড়ে না পালায় তাহলে সিংহ পেছন থেকে ঘাড়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু, আতংকে ক্লডিয়া এই ভুলটি করে বসে। সিংহী তাকে তাড়া করে। এই যাত্রাতেও শন তার দক্ষ হাতে সিংহীকে সামান্য আহত করে ক্লডিয়াসহ পুরো দলকে রক্ষা করে।

মিশন ব্যর্থ হলে তারা ক্যাম্পে ফিরে যায়। এভাবে কয়েকদিন প্রচেষ্টা এবং বিপদের সম্মুখীন হবার পরে সেই মহেন্দ্রক্ষণ এসে যায়। ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেটকে সিংহীর সাথে সঙ্গমরত অবস্থায় তারা পেয়ে যায়। তাদের সৌভাগ্য, শিকারের জন্য এটি আদর্শ সময়। শন কর্টোনি- রিকার্ডোকে বন্দুক তাক করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু, বাঁধ সাধে ক্লডিয়া। সে মনে করে এটি খুব অন্যায় হয়ে যাবে। তাই, ফায়ারিং এর আগ মূহুর্তে চিৎকার করে সিংহকে সতর্ক করে দেয়, রিকার্ডো আচমকা গুলি চালিয়ে ফেলে। তবুও পেটে গুলি লেগে ঘায়েল হয় সিংহ। কিন্তু, আহত সিংহের চেয়ে ভয়ংকর আর কিছুই হয় না। সবাই, সাবধানে সিংহের পিছু নিতে থাকে। একসময় তারা কাতর সিংহকে খুঁজে পায় এবং চারিদিক থেকে গুলি চালিয়ে শিকার সম্পূর্ণ করে। কিন্তু, আসন্ন বিপদ সম্পর্কে তারা অবগত ছিল না।

কাছে গিয়ে দেখে এটি আসলে সেই সিংহীটি! যার ছোটো বাচ্চা আছে। তারমানে ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট বেঁচে আছে। অকস্মাৎ, ঝোপের আড়াল থেকে ফ্রেডেরিক তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। শনের এক কর্মচারীকে ঘায়েল করে তার কোমড় থেকে পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। শন দ্রুত কার্তুজ ও ম্যাগাজিন লোড করে গুলি চালায়। অবশেষে, পরাস্ত হয় আফ্রিকার বৃহত্তর জঙ্গল কাঁপিয়ে বেড়ানো গর্বিত সিংহ! যদিও এর জন্য শনকে লাইসেন্স এবং প্রিয় বন্ধু দুটিকেই হারাতে হলো!

ক্লডিয়া এই ঘটনা জানার পরে অনুতপ্ত হয়। শন তাকে বোঝায়, ক্লডিয়ার ভাবনা ভুল। একটি স্বাস্থ্যবান পালের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ। যাতে নতুন প্রজন্ম টিকে থাকার অনুকূল পরিবেশ পায়। ক্লডিয়ার সামান্য ভুলের জন্য মা সিংহী মারা গেছে, ফলে দুধপায়ী বাচ্চাগুলোও মারা যাবে। ক্লডিয়া বিমর্ষ হয়ে পড়ে৷

ক্যাম্পিংয়ের মেয়াদ শেষ হতে কিছুদিন বাকী। এমন সময় ক্যাম্পে খবর এলো তুকুটেলাকে দেখা গেছে! শোনা মাত্রই তারা কৌতুহলী হয়ে উঠল। ভেতরের শিকারী সত্তা পুনর্জীবিত হয়ে উঠল। তুকুটেলা হলো আফ্রিকার বিলুপ্ত প্রায় সর্ববৃহৎ হাতি৷ যার দাঁত প্রায় সাড়ে আট ফুট! যদিও আফ্রিকার সরকার কতৃক হাতিটিকে মনিটরিং-এর জন্য গলায় বেল্ট পরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু, আনন্দের ব্যাপার এই যে হাতিটি সম্প্রতি বেল্টটি ছিড়ে ফেলেছে ফলে সে এখন মনিটরিং-এর কবল থেকে মুক্ত। শিকারের জন্য উন্মুক্ত এখন সে।

অনুসন্ধানের পরে তারা চাক্ষুষ তুকুটেলার দেখা পেল। রিকার্ডো মন্টেরোর চোখ ধাঁধিয়ে দিল চকচকে দুটি দাঁত। সংগ্রহের জন্য এরচেয়ে ভালো আর কিছু হতেই পারে না! রিকার্ডো বললেন, যে মুল্যেই হোক আর যেভাবেই হোক তুকুটেলাকে তার চাইই!

তারা নতুন অ্যাডভেঞ্চারে নেমে পড়ে। এই যাত্রাতেও ক্লডিয়া তাদের সঙ্গী হয়েছিল। তারা তুকুটেলার পিছু নেয়। আর পিছু নিতে গিয়েই তারা কল্পনাতীত বিপদের মধ্যে পড়ে যায়।

তুকুটেলা জঙ্গলের সিমান্ত পেরিয়ে মোজাম্বিকে ঢুকে পড়ে। মোজাম্বিকে তখন চলছে ভয়াবহ যুদ্ধ। তবুও তারা রিস্ক নিয়ে অনুসরণ করতে থাকে। বিভিন্ন বিপদ পেরিয়ে তারা আসল বিপদের সম্মুখীন হল! ঠিক যেন ছোটো-ছোটো ঢেউয়ে ভাসতে-ভাসতে গিরিখাতে গিয়ে পড়া! শন ও তার সঙ্গীদের আটক করে কমরেড চায়নার বাহিনী।

কমরেড চায়না হলেন শনের পূর্ব শত্রু। যুদ্ধের সময়ে শনের গুলির আঘাতে চায়নার এক চোখ অন্ধ হয়ে যায়। কমরেড চায়না শনকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। সে ক্লডিয়াকে আটকে রেখে শনকে বাধ্য করল তার পক্ষে যুদ্ধ করতে এবং তার বাহিনীকে নেতৃত্ব দিতে। কমরেড চায়না জানতেন শন কতটা দক্ষ যোদ্ধা। তার বিশ্বাস ছিল শনই এই কাজের যোগ্য। শন বাধ্য হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং শেষমেষ যুদ্ধে জয়ী হয়। কিন্তু, কমরেড তার কথার খেলাপ করে। তার বাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্য শনের কাছে প্রস্তাব করে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে তবেই শন ও ক্লডিয়াকে তিনি মুক্ত করে দেবেন।

কোনো উপায় না থাকায় শন প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়। প্রশিক্ষণ শেষে কমরেড কথা রাখে এবং শন ও ক্লডিয়াকে মুক্ত করে দেন। কিন্তু, কমরেড চায়নার বাঁকা হাসিতে অন্য কিছুর ঝিলিক দিচ্ছিল। যাতে স্পষ্ট ছিল আরও বড়ো বিপদের সতর্কবাণী।

সীমান্ত মাত্র দুদিনের পথ কিন্তু তা যেন হয়ে উঠেছিল দুই আলোকবর্ষ সমান! পথের প্রতি মূহুর্তে বিপদের হাতছানি। কমরেড চায়না চাতুরীতে ওদের সামনে যাবার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আবার পেছনেও লেলিয়ে দিয়েছে তার বাহিনীকে। আবার দুপাশ থেকে ধেয়ে আসছে ফ্রেলামো বাহিনী। শনের সাথে সঙ্গী মাত্র দুজন ক্লডিয়া এবং মাতাও। তারা চারিদিকে থেকে আটকে পড়েছে। অবশেষে এসে গেল এ টাইম টু ডাই মূহুর্ত। হয় বাঁচো নাহয় মরো। এর বাইরে আর কোনো আশা নেই।

শেষমেশ তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল? মাত্র তিনজনে এত বিশাল বাহিনীর বিপক্ষে কীভাবে সার্ভাইব করেছিল জানতে পড়ে ফেলুন স্যার উইলবার স্মিথের এই অসাধারণ উপন্যাসটি। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাসপেন্স ধরে রেখেছেন তিনি। উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ করেছেন মখদুম আহমেদ। যথেষ্ট সাবলীল এবং সহজবোধ্য অনুবাদ।

মন্তব্য:

বই প্রেমিদের জন্য এটি একটি মাস্ট রিড বই। বইটি পড়ার সময়ে আপনি শন কর্টোনির সাথে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে পারবেন। যুদ্ধের ময়দান থেকে বেঁচে ফিরে শুকরিয়া আদায় করার সুযোগ পাবেন। প্রতি মূহুর্তের থ্রিল বিমোহিত করে রাখবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।

সতর্কবাণী:

বইটিতে অনেকগুলো ডিস্টার্বিং এবং ভায়োলেন্স দৃশ্যের বর্ণনা আছে। দু’এক জায়গায় রগরগে যৌনতার বর্ণনাও রয়েছে। তাই কিশোরদেরকে নাগালের বাইরে রাখাই ভালো।

গল্পসল্প বুক রিভিউ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

জুতা (ছোট গল্প)- আফিন্দী

জুতাবিদ্যুৎ’এর গলার তেজে ফাঁকা মেসরুম গমগম করে উঠলো, “ভাই, তুমি যাবে পাঁচ ভাইয়ে? খিদেয় আমার জান যায়! খালা...

মৃত্যু পরবর্তী জগতের অভিজ্ঞতা 

মৃত্যু পরবর্তী জগতের অভিজ্ঞতা  মৃত্যু পরবর্তী জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন? মানুষ তার অনিশ্চিত জীবনে শুধু একটি বিষয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে জন্মেছে।...

বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’

বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের 'মেঘ বলেছে যাব যাব' বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের 'মেঘ বলেছে যাব যাব'।বইয়ের নাম:মেঘ বলেছে যাব...

ডা. স্যাটান: সিরিয়াল কিলার ডা. মার্সেল পেটিওটের ভয়ংকর গল্প!

তাকে আখ্যা দেয়া হয়েছিল ডা. স্যাটান বলে। তিনি একই সাথে একজন সৈনিক, ডাক্তার, মেয়র, ভয়ঙ্কর অপরাধী এবং সিরিয়াল...