অভিমানে ভরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর শেষের জীবন!

তারিখ:

পোস্ট শেয়ার করুন:

অভিমানে ভরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর শেষের জীবন!

ঈশ্বরচন্দ্র বিধ্যাসাগর এমনই এক মহা মানুষ, যিনি সমাজের তথাকথিত বর্বোরচিত অনেক নিয়ম কে আস্তাকুঁড়ে ফেলে এ সমাজ কে করেছে নারী এবং শিশু বান্ধব! সমাজকে দেখিয়েছে আলোর দিশা-করেছে কলংকমুক্ত, শিক্ষার আলোতে দিয়েছে মুড়িয়ে, কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে করেছে পার- করেছে আধুনিক, করেছে নারী ও শিশু বান্ধব!

ছোট বেলা থেকেই আমরা আমাদের পাঠ্য বইয়ে পড়ে এসেছি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এমন এক বড় পন্ডিত ছিলেন, যিনি একবার কোন বইয়ের পাতা পড়লে তা আর দ্বিতীয়বার পড়ার প্রয়োজন বোধ করতেন না, ছিড়ে ফেলতেন সেই পাতা। হ্যাঁ প্রিয় পাঠক, প্রচণ্ড মেধাবী, শিক্ষানুরাগী, সমাজ সেবক, শিক্ষা গবেষক, বাংলা, সংস্কৃত এবং ইংরেজি ভাষার পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিধ্যাসাগর’কে নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা – চলুন তাহলে শুরু করা যাক-

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এক মহান জ্ঞানী মানুষ ছিলেন, ছিলেন সমাজ সংস্কারক, ব্যাক্তিগত এবং সামাজিক উদ্যোক্তা। ব্যাক্তিজীবনে তিনি ছিলেন শিক্ষক এবং লেখক। বহু গুণে গুনাম্বিত এই পন্ডিত ব্যাক্তি জীবনের শেষ দিন অবদি কাজ করে গেছেন বিভিন্ন সামাজিক প্রচলিত কুসংস্কার এবং বর্বর নিয়মের বিরুদ্ধে। ভারতীয় নারীদের জীবন ব্যাবস্থা পরিবর্তন এবং ভারতীয় শিক্ষা ব্যাবস্থায় এক আমুল পরিবর্তন আনতে এই শিক্ষা গুরুর ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিরস্মরণীয় এই পন্ডিত ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন ১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর পশ্চিম বাংলার মোদিনীপুর জেলায় বীরসিংহ নামক গ্রামে।
তাঁর পিতা ছিলেন ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী।

১৮২৮ সালে পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্তি করেন বিদ্যাসাগর। এরপর ১৮২৯ সালে ব্যাকরণের ৩য় শ্রেণীতে ভর্তি হোন কলকাতার সংস্কৃত কলেজে। অবশ্য তিনি পরে পাশাপাশি ইংরেজি শ্রেণিতেও ভর্তি হন ১৮৩০ সালে। বিদ্যাসাগরের শিক্ষাজীবন ছিলো খুবই সমৃদ্ধ। পুরো শিক্ষাজীবন তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বিভিন্ন বৃত্তি এবং মাসিক মাসোহারা পেয়েছেন। ১৮৪০ থেকে ১৮৪১ সালে সালে বিদ্যাসাগর তাঁর কলেজ জীবনের সমাপ্তি টানেন।

এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিৎ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পুরো শিক্ষাজীবন এতোটাই উন্নত, বর্ণিল এবং অবাক হওয়ার মতো ছিল, তা নিয়ে লিখতে গেলে পুরো একদিন লেগে যাবে। শিক্ষাজীবন এর প্রতিটা স্তরে উনি ছাপ রেখেছেন অত্যন্ত মেধা এবং প্রবল ধৈর্য্যের এক অনন্য সমন্বয়।

যাই হোক ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজের শিক্ষা গ্রহন শেষে উনি কর্মজীবন এ প্রবেশ করেন। মাত্র একুশ বছর বয়সেই প্রধান পন্ডিত হিসেবে চাকুরী শুরু করেন ফোর্ট উইলিয়াম সরকারি কলেজে৷ মুলত কর্মজীবনে প্রবেশ করার পরপরেই উনি উনার সাহিত্য সাধনা শুরু করেন এবং সমাজ সংস্কারক হিসেবে উদ্যাগ গ্রহন করা শুরু করেন।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং গদ্যকার হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। এছাড়াও উনার পাণ্ডিত্য ছিলো সংস্কৃত ভাষা, বাংলা ভাষা এবং ইংরেজি ভাষাতে। বলা বাহুল্য, সংস্কৃত ভাষায় প্রবল পান্ডিত্য দেখানোর কারনেই তিনি তৎকালীন সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে বিদ্যাসাগর উপাধিটি লাভ করেন।

ব্যক্তিজীবন বিদ্যাসাগর ছিলেন খুবই বিনয়ী, নম্র, ভদ্র এবং দৃঢ়চেতা ধরণের লোক। উনি যদি সংকল্প করতেন উনি উনার লক্ষ্য পুরণ করবেন, সেটা তিনি করেই ছাড়তেন।

তৎকালীন ভারত উপমহাদেশে এমন কিছু নিয়ম ছিলো, যা আদিম বর্বরতাকে ও হার মানিয়ে যেতো ৷ তিনি বহু চেষ্টা এবং দেনদরবার করে এইরকম কিছু নিয়ম তখন বন্ধ করেন। বহুবিবাহ, সহমরণ, শিশু বিবাহ এসব তিনি বন্ধ করান। পাশাপাশি হিন্ধু বিধবাদের পুণর্বিবাহ, এবং নারী ও শিশু শিক্ষার জন্য তিনি আজীবন লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। এবং শেষ পর্যন্ত ১৮৫৬ সালেই হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ এর আইন উনি পাশ করিয়েছিলেন।

শিক্ষা খাতে এই মহামুনীষির ভুমিকা ছিলো এতো বেশি, যে এক এক করে সব বলতে গেলে আজকের সেশন মেলা লম্বা হয়ে যাবে। আপনারা হয়তো জানেন বাংলা লিপি সংস্কারক হিসেবে উনাকে বাংলা সাহিত্যের সবাই এক নামেই চেনে। বিভিন্ন ভাষায় উনার দক্ষতা ছিলো অসাধারণ, উনি তাঁর দক্ষতার বিশ্লেষন করে বাংলা ভাষাকে সাধারণ এর জন্য করেছেন যুক্তিবহ করেছেন সহজপাঠ্য।
বাংলা ভাষায় এবং সংস্কৃত ভাষায় উনি একাধিক বই রচনা করেছেন৷ এছাড়াও উনার বেশ কিছু অনুবাদ গ্রন্থ ও রয়েছে। শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় রচনা করেছেন। এছাড়াও বাংলা গদ্যে উনার অসামান্য অবদানের জন্য ররবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উনাকে বাংলা গদ্যের প্রথম লিপিকার হিসেবেও অভিহিত করেছেন।

১৮৯১ সালের ২৯ শে জুলাই নারী বান্ধব সমাজের অগ্রদুত এই প্রাত: স্মরণীয় এই মহাগুণী, মহা পন্ডিত ইহলোক ত্যাগ করেন কলকাতাতে।

তো এই পুরোধা ব্যাক্তি, যিনি ছিলেন গরীবের বন্ধু, দয়ার সাগর, যার কাছ থেকে কোন গরীব, আর্ত অসহায়, অসুস্থ রোগী কখনো শুণ্য হাতে ফেরত যেতো না- যিনি ছিলেন পিতামাতার জন্য নিবেদিত প্রাণ, পিতামাতার প্রতি প্রবল ভক্তি এবং বজ্রকঠিন চরিত্রের কম্বিনেশন এ যিনি ছিলেন অনবদ্য, কিভাবে কেটেছিল উনার শেষ জীবন?

১৮৪১ সালে কর্মজীবন শুরু করে কর্মবৈচিত্রতার মধ্য দিয়ে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত তা চালু রাখেন।যদিও ইতিমধ্যেই সরকারি চাকুরী স্বইচ্ছায় ইস্তফা দেন, তবুও ততদিনে তিনি গদ্য লেখক, অনুবাদক, ব্যাকরন রচনাকারক এবং বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন মুলক কর্মের জন্য বহুল পরিচিত হয়ে গেছেন।

যাই হোক, ১৮৭০ সালে বিদ্যাসাগরের মা ভগবতী দেবী দেহত্যাগ করেন। এর পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে৷ আবহাওয়া পরিবর্তন করার প্রয়াশে উনি ঝড়খান্ডে ( ততকালিন কার্মাটার) সুন্দর এবং ছিমছাম একটি বাংলো বাড়ি কিনেন।এখানে এসেও উনার দাতব্য কাজ, সমাজ উন্নয়ন উনি চালিয়ে যেতে থাকেন।

কীভাবে কেটেছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শেষ জীবন!

সুদীর্ঘ এক বর্নিল এবং প্রাণচাঞ্চল্য ভরা শিক্ষা জীবন এবং কর্মজীবন অতিক্রাম করে শেষ বয়সে এসে খুব একটা ভালো সময় কাটিয়ে যেতে পারেননি এই মহাপন্ডিত। অভিমানে ক্ষতবিক্ষত এবং ভগ্ন হৃদয় নিয়ে এমনকি নিজের স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করতেও বাড়িতে যাননি উনি। বিনয়ী এই মহামান্য পন্ডিত নিজের ছেলেকেও করে গেছেন তাজ্য। মা বাবা কে টানেন নি কাছে। মা বাবা দুজনেই কাশিবাসী ছিলেন এবং সেখানেই এক এক করে মারা গেছেন।

বলা চলে একেবারে একাকী, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে উনি উনার শেষ জীবনটা কাটিয়েছেন। এমন না উনাকে শুধু স্ত্রী পুত্র বাবা মা অথবা নিজের আপনজনেরাই কষ্ট দিয়েছেন, তৎকালীন সুশীল সমাজ, ইংরেজ শাসক গোষ্ঠী, কিছু লোভী, স্বার্থান্বেষী জমিদার সবাই মিলে বিষিয়ে দিয়েছিলেন মাত্র পঞ্চান্ন বছর বয়সী বিদ্যাসাগরের মানসিক জীবন। অমানুষিক অভিমান আর ক্ষোভ থেকেই একেবারে নিভৃতে নীরবে নিজের উইল লিখেন ১৮৭৫ সালের ৩১ ই মে তার নিজের কেনা আর্মহাস্ট স্ট্রিটের বাংলোতে বসে।

পঁচিশটি অনুচ্ছেদে রচিত এই উইলের শেষ অনুচ্ছেদ দেখলেই পাঠকেরা বুঝতে পারবেন শেষ জীবনে কতটা মানসিক অবসাদে কাটিয়েছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

‘‘আমার পুত্র বলিয়া পরিচিত শ্রীযুক্ত নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় যারপরনাই যথেচ্ছাচারী ও কুপথগামী এজন্য, ও অন্য অন্য গুরুতর কারণবশতঃ আমি তাহার সংশ্রব ও সম্পর্ক পরিত্যাগ করিয়াছি। এই হেতু বশতঃ বৃত্তিনির্বন্ধস্থলে তাহার নাম পরিত্যক্ত হইয়াছে এবং এই হেতুবশতঃ তিনি চতুর্বিংশধারা নির্দিষ্ট ঋণ পরিশোধকালে বিদ্যমান থাকিলেও আমার উত্তরাধিকারী বলিয়া পরিগণিত অথবা… এই বিনিয়োগ পত্রের কার্যদর্শী নিযুক্ত হইতে পারিবেন না।’’

উইল লেখার পরেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবিত ছিলেন আরো ষোলো বছর। বস্তুত, মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে ১৮৫৮ সালে যখন উনি পদত্যাগ করেছিলেন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক এর পোস্ট থেকে-তখন থেকেই উনার জীবনের অবরোহন কাল শুরু হয়ে যায়৷ নিজের দুচোখ ভরা যে অদম্য স্বপ্ন নিয়ে, তা অনেকটাই নিস্পেষিত হতে থাকে প্রবল প্রতিপত্তি এবং স্বচ্ছল জীবন থেকে সরে আসার জন্য। পারিবারিক নিরাশা সেদিন থেকেই উনাকে জীবন নৈরাশ্যের দিকে ঠেলতে থাকে।

বিদ্যাসাগরের পারিবারিক জীবন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাঁর জীবন নিরানন্দ হওয়ার পেছনে প্রধান ভুমিকা ছিলো তাঁর পুত্র নারায়নচন্দ্র, মাতা ভগদেবি এবং স্ত্রী দীনময়ী দেবীর।

পারিবারিক কোন্দল ঠিক না, তবে নিজের গ্রামের এক বিবাহ ঘটানোর ঘটনায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ক্ষেপে ছিলেন নিজের মা, স্ত্রী এবং পুত্র নারায়ণ এর উপর। সারাজীবনের জন্য গ্রাম ছেড়েছিলেন, এমনকি উনার স্ত্রীর মারা যাওয়ার খবরেও আর গ্রামমুখো হননি। গ্রাম ছাড়ার পরেও ২২ বছর বেঁচে ছিলেন৷ কিন্তু একবারের জন্যে ও আর গ্রাম দর্শনে যান নি। নিজের বাড়ি ঘর, নিজের হাতে গড়া স্কুল, আত্মীয় সজন সব পেছনে ফেলে এক অদ্ভুত অভিমানের জীবন কাটিয়ে গেছেন বিদ্যাসাগর।

ষাটটির উপরে বিধবাবিবাহ নিজ খরচে করাতে যেয়ে, ১৮৬৬-১৮৬৭ সালের দুর্ভিক্ষে দেনা করে অন্নসত্র খুলতে যেয়ে প্রচুর দেনাতে আক্রান্ত হোন বিদ্যাসাগর। দেনা পরিশোধ এর জন্য নিজের প্রতিষ্ঠা করা বুক ডিপোজিটরি দান করে দিয়েছিলেন, নিজের করা প্রেস এর কিছু অংশ বিক্রিও করে দিয়েছিলেন৷ প্রেসের কাজে তেমন সময় দিতে পারতেন না, এর সুযোগ নিয়ে কর্মচারীরা করেছিলো চরম অনিয়ম আর দুর্নীতি!

এছাড়াও নিজের পুত্র নারায়ণকে বের করে আনতে পারেন নি নিজের পিতার অতিরিক্ত স্নেহ আদর থেকে, ফলশ্রুতিতে নারায়ন এর শিক্ষা গ্রহণ কেবল প্রাথমিক লেভেল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। কুপথে গিয়েছিলো নারায়ন, তাই নারায়নকে তিনি ত্যাজ্য করেছিলেন।

সব মিলিয়ে প্রচন্ড বিক্ষিপ্ত ছিলেন বিদ্যাসাগর৷ শরীর ও মন দুটোই গিয়েছিল ভেঙে।

এরপর ১৮৬৬ সালে মিস মেরি নামক এক ইংরেজি বিদ্যাহৈতিষীর সাথে মেয়েদের এক স্কুল পরিদর্শন থেকে ফেরার সময় গাড়ী উলটে আহত হোন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, চোট পান লিভার এবং আ্যবসেসে৷

এই লিভারের চোট আর উনাকে ভালো থাকতে দেয়নি। আমরন এর যন্ত্রণা উনি বয়ে বেরিয়েছিলেন। শেষ বয়সে এসে মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণায় প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছেন, তবুও উনার কলম থেমে থাকে নি।

সবাই বলে মারা যাওয়ার আগে উনাকে আনন্দ দিয়েছিল দুটো ঘটনা, এক উনার পুত্র নারায়ণ এর বিয়ে তাও এক বিধবার সাথে, দুই উনার গড়া মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন।

১৮৭০ সালে পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে পুত্রের বিবাহ দেন এক বিধবার সাথে, তার এক বছর পরেই উনার মাতার অন্ত:র্ধান ঘটে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে৷

এর পরেই শিশুর মতো আকুল হয়ে পড়েন তিনি। শরীরের ভগ্নদশা নিয়েই চালিয়ে যেতে থাকলেন লেখালেখির কাজ, সমাজ সেবার কাজ। ১৮৭৯ সালে উনার গড়া মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন উন্নীত হলো প্রথম শেণির কলেজ এ এবং এটিই উনার জীবনের শেষ ঘটনা যা উনাকে কিছুটা হলেও আনন্দ দিয়েছিলো।

১৮৯১ সালে স্থায়ী ভাবে চলে আসেন কলকাতার বাদুড়বাগানের বাড়িতে। শারীরিক যন্ত্রণা তখন প্রবল, দাঁতে দাঁত খিটে সহ্য করেন ব্যথা-প্রকাশ অতটা করেন না।

ইংরেজ ডাক্তাররা দিলেন জবাব- চিকিৎসা চালালেন ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার! বাদুড়বাগানের বাড়িতে এসেছিলেন জুন মাসে, কিন্তু দেড় কি দু’মাস যেতেই ২৯ শে জুলাই রাত এগারোটা পর থেকে আর উনার কোন রেস্পন্স পাওয়া যায়নি৷

রাত ঠিক দুটা আঠারো মিনিটে শেষ বারের মতন চোখ খুলে নিজের পুত্রের দিকে তাকিয়েছিলেন৷ এরপর নিস্তব্দ নিথর হয়ে গেলেন চিরজীবনের জন্য।

এক কালজয়ী পুরুষের জীবনের অন্তিম মুহুর্ত কাটলো প্রচন্ড মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট পেতে পেতে।

মারা যাওয়ার বাইশ বছর আগের যে অভিমান উনার মনে জন্ম দিয়েছিলেন উনার মাতা, স্ত্রী এবং পুত্র- সেই অভিমানের রেশ ধরেই একেবারে নীরবে, নিভৃতে প্রবল অভিমান আর হৃদয় ক্ষরণ নিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় অষ্টম হওয়া এই মহা মুনিষী।

ধারণা করা হয় মায়ের উপর প্রচন্ড অভিমানেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনের শেষ বাইশটি বছর একাকী নিভৃতে কাটিয়ে গেছেন। চরম মাতৃভক্তির জন্য সুপ্রশিদ্ধ বিদ্যাসাগর এমনকি মায়ের ডাকে দমোদর নদীও সাতরে পার হয়েছিলেন, মায়ের নির্দেশই স্থাপনা করেছিলেন অসংখ্য বিদ্যালয় আর বিনাবেতন এর ছাত্রবাস- কিন্তু সেই মা যখন বিদ্যাসাগরের অমতে যেয়ে রাতের আধারে বিয়ে দেন মুচীরাম এবং মনমোহিনী কে-বিদ্যাসাগর প্রবল অপমানে, লজ্জা আর অভিমানে ছিন্ন করেছিলেন সব সম্পর্ক! বেঁচে ছিলেন যতদিন- দুর থেকেই সব দায়িত্ব পালন করে গেছেন, কিন্তু নিজে থেকে গেছেন সবার অগোচরে, সবার চোখের আড়ালে এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে!

ধন্যবাদ সবাইকে।

গল্পসল্প আড্ডা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

spot_img

সম্পর্কিত নিবন্ধ

জুতা (ছোট গল্প)- আফিন্দী

জুতাবিদ্যুৎ’এর গলার তেজে ফাঁকা মেসরুম গমগম করে উঠলো, “ভাই, তুমি যাবে পাঁচ ভাইয়ে? খিদেয় আমার জান যায়! খালা...

মৃত্যু পরবর্তী জগতের অভিজ্ঞতা 

মৃত্যু পরবর্তী জগতের অভিজ্ঞতা  মৃত্যু পরবর্তী জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন? মানুষ তার অনিশ্চিত জীবনে শুধু একটি বিষয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে জন্মেছে।...

বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’

বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের 'মেঘ বলেছে যাব যাব' বুক রিভিউ- হুমায়ূন আহমেদের 'মেঘ বলেছে যাব যাব'।বইয়ের নাম:মেঘ বলেছে যাব...

ডা. স্যাটান: সিরিয়াল কিলার ডা. মার্সেল পেটিওটের ভয়ংকর গল্প!

তাকে আখ্যা দেয়া হয়েছিল ডা. স্যাটান বলে। তিনি একই সাথে একজন সৈনিক, ডাক্তার, মেয়র, ভয়ঙ্কর অপরাধী এবং সিরিয়াল...