দ্য কিলার ক্লাউন জন ওয়েইন গেসি
১৯৬৮ সালে John Wayne Gacy-এর অন্ধকার অধ্যায় প্রকাশ পায় ডোনাল্ড ভুরহিজ নামক কিশোরকে যৌন নির্যাতন করার জন্য, তখন তার দশ বছরের সাজা হয়। জেলে তার আচরণ ছিল খুব ভালো। এই ভালো আচরণের জন্য গেসির সাজা কমে যায়, মাত্র ১৮ মাস সাজা কাটিয়ে সে জেল থেকে ছাড়া পায়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপরই গেসি বিয়ে করে। কিন্তু কিছুদিন পর তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়, কারণ তার বউ জেনে যায় যে তার স্বামী একজন সমকামী। গেসি “Pogo the Clown” এর পোষাক পরে বাচ্চাদের পার্টি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে কাজ করত, তাই খুব দ্রুতই সমাজে জনপ্রিয় এবং প্রতিবেশীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল এই ক্রমিক খুনি। ব্যক্তিজীবনে গেসি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবেও বেশ সুনাম করেছিল।
জন গেসি প্রথম হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় ১৯৭২ সালে, এবং গ্রেফতার হবার আগ পর্যন্ত সে ৩৩ জনকে হত্যা করেছে বলে জানা যায়। মৃতদেহগুলোর মাঝে গেসি তার বাড়ির বাগানে পুঁতে দিয়েছে ২৬ জনকে, চারজনের মৃতদেহ নিকটবর্তী প্লেইনস নদীতে ফেলে দিয়েছে এবং বাকি তিনজনের মৃতদেহের খবর অজানা রয়ে গেছে। ১৯৭৮ সালে ২১ ডিসেম্বর গেসিকে গ্রেফতার করা হয় কিশোরী রবার্ট পাইস্ট নিখোঁজ হবার ঘটনায়। তেত্রিশটি খুনের জন্য তাকে দোষী সাবস্ত্য করে অভিযোগ আনা হয়, যা সেই সময়ে আমেরিকার ইতিহাসে একজনের বিরুদ্ধে আনা সর্বোচ্চ অভিযোগ। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ১২টির জন্য গেসিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ১০ ই মে এই খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশনের দ্বারা।
গেসি তার শিকার হিসাবে টোকাই, পুরুষ যৌনকর্মী ও বাচ্চা ছেলেদের বাছাই করত। তার হত্যাকাণ্ডের কৌশল ছিল জাদু দেখাবার অজুহাতে শিকারের হাতে হাতকড়া পড়িয়ে দিয়ে অত্যাচার করা। গেসি এই কৌশলকে “handcuff trick” হিসেবে উল্লেখ করেছে। সে তার শিকারদের অজ্ঞান করে গাড়িতে তুলত, তাদের বাসায় এনে নির্যাতন ও রেপ করত এবং সবশেষে হত্যা করত। এই খুনির ছিল এক অদ্ভুত শখ, সে ভিক্টিমদের হাড়গোড় সংগ্রহ করত।
গেসি গ্রেফতার হবার পর তার বেসমেন্টে সাজিয়ে রাখা অসংখ্য হাড়গোড় পাওয়া যায়। যদি এই সব হাড়গোড় তার শিকার করা মানুষের হয়ে থেকে তাহলে হিসাব মতে সে ৩৯৫ জনকে হত্যা করেছে বলে অনুমান করা যায়। গোয়েন্দারা যখন তদন্ত করছিল গেসিকে নিয়ে তখন সে নিজেই দুজন গোয়েন্দাকে রেস্তোরায় খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং তাদের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে সে মন্তব্য করে এইভাবে, “You know…clowns can get away with murder”.
জন গেসির এই খুনে জীবন নিয়ে অসংখ্যা বই রচনা হয়েছে। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য—
- Killer Clown: The John Wayne Gacy Murders, by Terry Sullivan and Peter T. Maiken
- The Chicago Killer, by Joseph R. Kozenczak and Karen M. Kozenczak
জেফরি ডাহমার মিলওয়াকি মনস্টার
জেফরি ডাহমার (Jeffrey Dahmer) হলো আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস এবং ঘৃণ্যতম ব্যক্তি, যে “মিলওয়াকি ক্যানিবল” বা “মিলওয়াকি মনস্টার” নামে পরিচিত ছিল। ডাহমারের শিকার সংখ্যা অনুমান করে বলা হয় কমপক্ষে ১৭ জন। ১৯৬০ সালে জন্ম নেওয়া জেফরি ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটায়। সে আঠারো বছর বয়সেই প্রথম হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। এই নিষ্ঠুর খুনি মানুষকে নিজের বাসায় নিয়ে অত্যাচার করত, হত্যা করত এবং মৃতদেহের সাথে সহবাস করত; তারপর শরীর ব্যবচ্ছেদ করে নরমাংস ভক্ষণ করত। পুলিশ তাকে প্রথম গ্রেফতার করে ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে একটি যৌন হয়রানির অভিযোগে। বিচারে তার মাত্র এক বছর সাজা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একবছর সাজা ভোগের পরেই কিন্তু জেফরি ডাহমার পুনরায় হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে নতুন উদ্যমে। এই সময় সে আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।
১৯৯১ সালে ২৭ মে সিন্থাসোমফোন নামের এক চৌদ্দ বছরের বালককে নগ্ন ও আহত অবস্থায় পাগলের মতো রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, আর এই জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তারা ডাহমারের নাম জানতে পারেন। পুলিশ ঘটনা শুনে ডাহমারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায় ঐ ছেলের সাথে মদ খাওয়া নিয়ে তার সামান্য ঝগড়া হয়েছে, অন্য কিছু না। এই ঘটনার পর ১৯৯১ সালের ২২ জুলাই একজন নিরীহ মানুষ ডাহমারের হাত থেকে কোনোমতে মুক্ত হয়ে পুলিশকে বিস্তারিত জানায়, তখন পুলিশ ডাহমারকে আটক করতে সক্ষম হয় এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালায়। এসময়েই ডাহমারের ভয়ানক কুর্কীতিগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ে আস্তে আস্তে।
ধারণা করা হয় ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি সপ্তাহে একজন করে মানুষ হত্যা করে এই নিকৃষ্ট খুনি। ডাহমারকে গ্রেফতার করার পর ক্রিমিলান ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত অনুসন্ধানে তার বাসা থেকে বিভিন্ন অদ্ভুত ও ভয়ংকর জিনিস উদ্ধার করা হয়, যেমন—কাটা হাত, সংরক্ষিত যৌনাঙ্গ, এ্যাসিডে ভেজানো লাশ, রান্নাঘরে সাজিয়া রাখা কাটা মুণ্ডু, অনেকগুলো মাথার খুলি, ড্রিল মেশিন, হ্যাণ্ডকাফ, ফ্রিজে রাখা হৃৎপিণ্ড, সাতান্ন ড্রাম এ্যাসিড, অত্যাচারিত ব্যক্তিদের চুয়াত্তরটি পোলারয়েড ছবি। একটি মোমবাতির বেদীর সামনে পাওয়া গিয়েছিল সাতটি মাথার খুলি।
গোয়েন্দা প্যাট্রিক কেনেডির কাছে ডাহমার তার হত্যাকাণ্ডের কথা প্রথম স্বীকার করে। তার বক্তব্য থেকে জানা যায়—বেশিরভাগ মানুষকে সে প্রথমে অজ্ঞান করে খুলিতে এ্যাসিড অথবা গরম পানি ঢেলে দিত। নির্যাতনের পরে মরে গেলে সেই দেহ থেকে মাংস ভক্ষণ করত, এবং মৃতদেহ সংরক্ষণ করত।
একটি সাক্ষাৎকারে তার কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল মোমবাতির বেদীতে কেন সাতটি খুলি রেখেছিল? তখন ডাহমার বলেছিল, “place for meditation.”
জেফরি ডাহমারের জন্ম ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইকিনসনে। দাবী করা হয় ডাহমার শৈশবে অবহেলিত এবং মনোযাগ বঞ্চিত ছিল। ছোটবেলা থেকেই মৃত প্রাণীদের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়, তখন থেকেই সে মৃত প্রাণীদের হাড় সংগ্রহ ও সংরক্ষণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। যৌবনে প্রবেশ করার সাথে সাথেই ডাহমার বুঝেছিল সে সমকামী এবং এই কথা অভিভাবকের কাছে সে চেপে যায়। ১৯৭৮ সালে ডাহমার স্নাতক পাশ করে, স্নাতক পাশ করার আগে আগে স্কুলের পার্কিংয়ে তাকে প্রচুর বিয়ার পান করতে দেখেন এক শিক্ষক, তিনি এর কারণ জানতে চাইলে ডাহমার বলেছিল, “বাসায় অনেক সমস্যা, তাই।”
১৯৯২ সালে ডাহমারের বিচার কাজ শুরু হয়। তাকে ১৫টি হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষী সাবস্ত্য করা হয়। যদিও সে বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, স্কিজোটাইপাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার ও মেন্টাল ডিসঅর্ডারে সনাক্ত হয়েছিল; কিন্তু সেইসাথে আইনিভাবে বুদ্ধিমান হিসেবেও প্রমাণিত হয়েছিল। বিচারে তার ৯৩৭ বছর জেল হয়। বিচারকালে ডাহমার কারাবাসের পরিবর্তে নিজের মৃত্যুদণ্ড দাবী করে। ১৯৯৪ সালে তাকে জেলে পাঠানো হয়। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর কারাগারের জিমে ক্রিস্টোফার স্কেভার নামক একজন কয়েদির সাথে ঝগড়া বাধে জেফরি ডাহমারের এবং সে মারাত্মকভাবে আহত হয়। হাসপাতালে যাবার পথে এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মারা পড়ে ইতিহাসের অন্যতম সিরিয়াল কিলার জেফরি ডাহমার মিলওয়াকি মনস্টার।
জেফরি ডাহমার মিলওয়াকি মনস্টারকে নিয়ে হলিউডে বেশকিছু চলচিত্র নির্মিত হয়েছে—
- My Friend Dhamer
- Dhamer
- The Secret Life: Jeffrey Dahmer
অনেকগুলো তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে এই কুখ্যাত খুনিকে নিয়ে—
- The Jeffrey Dahmer Files
- Inside the mind about Jeffeey Dhamer.
জেফরি ডাহমারকে নিয়ে অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য হলো—
- The Jeffrey Dahmer Story: An American Nightmare
- Dahmer’s Confession: The Milwaukee Cannibal’s Arrest Statements
- Jeffrey Dahmer: A Terrifying True Story of Rape, Murder & Cannibalism
দ্য বিস্ট- লুইস গারাভিতো
ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত এই খুনি “দ্য বিস্ট” নামে পরিচিত। কলম্বিয়ান এই ধর্ষক ও খুনি ১৩৮ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যার কথা আদালতে নিজের মুখে স্বীকার করেছিল। তবে তার দেওয়া তথ্য অনুসন্ধান করে ধারণা করা হয় সে ৩০০ এর অধিক মানুষকে নিজের ইচ্ছেমতো হত্যা করেছে।
১৯৫৭ সালে কলম্বিয়াতে জন্ম নেওয়া গারাভিতো ছিলেন সাত ভাইয়ের মধ্যে বড়, সে মাত্র কয়েকবছর স্কুলে পড়াশোনা করেছে। তার মা ছিলেন পতিতা। গারাভিতো শৈশবেই মদ্যপ পিতার ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৬ বছর বয়সে এই কঠিন নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। বাড়ি থেকে পালিয়ে গারাভিতো পুরো কলম্বিয়া জুড়ে ভ্রমণ করা শুরু করে। সে এই সময় বিভিন্ন দোকানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করে।
গারাভিতোর শিকারের প্রায় সকলই ছিল ৬-১৬ বছর বয়সী ছেলেরা। এই কিশোরেরা ছিল অনাথ, গৃহহীন ও গৃহস্ত পরিবারের সন্তান। বাচ্চাদের নিজের কব্জায় আনতে গারাভিতো সন্ন্যাসী বা পুরোহিতের ছদ্দবেশ ধারণ করত। সে গরীব কৃষক ছেলেদের অর্থ ও পানীয়ের লোভ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করত দিনের পর দিন। মানুষের চোখে যেন তার আচরণ ধরা না পড়ে তাই সে নিয়মিত তার চরিত্র বদলে ফেলত।
গারাভিতো মানুষকে খুন করার আগে শক্ত করে বেঁধে ফেলত, তারপর উলঙ্গ করে বেদম নির্যাতন ও ধর্ষণ করত। কখনো কখনো সে শিকারের মলদ্বারে ধারালো জিনিস ঢুকিয়ে দিত ও অণ্ডকোষ কেটে ফেলত।
ধর্ষণের অভিযোগে ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার করা হয় গারাবিতোকে। এর আগ পর্যন্ত সে পুরো কলম্বিয়া জুড়ে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তার উপর ১৭২টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছিল, কিন্তু ১৩৮ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত, ১৮৫৩ বছরের কারাবাসের সাজা দিয়েছিল গারাভিতোকে তার অপরাধের জন্য যা কলম্বিয়ার ইতিহাসে দীর্ঘতম; কিন্তু কলম্বিয়ান আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ কারাভোগের সাজা ৪০ বছর!
গারাভিতো পুলিশকে তার হত্যাকাণ্ডের যাবতীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে বলে তার সাজা কমিয়ে মাত্র ২২ বছর করা হয়। এই সাজা কমানোয় বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে, কিন্তু কলম্বিয়ার আইন অনুযায়ী তাকে এর বেশি সাজা দেওয়ারও উপায় ছিল না।
২০২১ সালে এই ক্রমিক খুনির মুক্তির সম্ভাবনা আছে। গারাভিতোর ঘটনার পর কলম্বিয়ার আইনে পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ কারাবাস ৬০ বছর করা হয়েছে।
ফ্রান্সিস আর্মস্ট্রং গারাবিতোকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম— LUIS GARAVITO: Hunting the Beast: The Story of a Colombian Serial Killer.