মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ্রিস্টান হলেন কিভাবে?
মাইকেল মধুসূদন দত্ত অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি, নাট্যকার এবং প্রহসন রচয়িতা। তিনি বাংলার সাহিত্যের নবজাগরণে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর জন্ম যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে। ইংরজি ভাষায় শুরুতে সাহিত্য রচনা করলেও পরবর্তীতে তিনি মাতৃভাষার প্রতি মনোযোগ দেন। তিনি বাংলা সনেট এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয়। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় এই মহাকবির মৃত্যু হয়।
তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনাটি ছিল তিনি যখন খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন।
সম্ভবত দিনটি ছিল ২রা ফেব্রুয়ারী। কবি মধুসূদন দত্ত সেলুন থেকে সেদিন ফিরিঙ্গী কায়দায় চুল ছাট দিয়ে এলেন। হিন্দু কলেজে তাঁর বন্ধুরা সেই চুলের ছাট কেউ পছন্দ করল না। কেউ কেউ বাঁকা বাঁকা মন্তব্যও করল। মধুসূদন দত্ত ছিলেন প্রতিবাদি স্বভাবের। পাল্টা কোন যুক্তি দেখালেন না, অস্বাভাবিকভাবে বেশ চুপচাপ রইলেন তিনি। পরেরদিন বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেলেন।
চারিদিকে খোঁজ খোঁজ রব পরে গেল। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না। জানা গেলো শেষবারের মতো তাকে দেখা গেছে দিগম্বর মিত্রের ছোটো ভাই মাধব মিত্রের সাথে। মিত্র বাড়ি থেকে তারা দুজন একসাথে বের হয়েছিলেন। মাধব মিত্র বাড়িতে ফিরে আসলেন কিন্তু মধুসূদন দত্ত বাড়ি ফিরে আসলেন না।
অবশেষে ৩ /৪ দিন পর মধুসূদন দত্তের খোঁজ পাওয়া গেলো। খ্রিস্টান মিশনারীরা তাকে ফোট উইলিয়াম দুর্গের ভিতর লুকিয়ে রেখেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো মধুসূদন দত্ত খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হতে চলছেন। মধুসূদন দত্তের বন্ধুরা তাঁর মা-বাবা অথবা সমাজের কোনো বাক্তি ঘুণাক্ষরে এই ঘটনা আগেভাগে কেউ টের পায়নি। কেউ ভাবতেই পারেনি কোলকাতার নামি দামি উকিলের ছেলে, হিন্দু কলেজের নামকরা ছাত্র খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছেন।
তবে এই ধর্মান্তর উপলক্ষে যাতে কোনো গণ্ডগোল না হয় অথবা কোনো চরম বিরোধিতার সম্মুখীন না হতে হয় অথবা মধুসূদন দত্তের বাবা উকিল রাজ নারায়ণ দত্ত লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে তার ছেলেকে উদ্ধার করে না নিয়ে যায়, সেজন্য ইংরেজ মিশনারীরা মধুসূদন দত্তকে তাদের নিজেদের কাছে নিয়ে নিয়েছিলেন। ফোট উইলিয়াম দুর্গের ভিতর তাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
তিনি স্বেচ্ছায় খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষা প্রার্থী। তাঁর বাবা কি তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেননি? তিনি আপ্রাণ প্রচেষ্টাই করেছিলেন। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ভিতর ছেলের কাছে পাঠিয়েছিলেন সরকার ঘনিষ্ট জমিদার সপ্তচরন ঘোষালকে। হিন্দু কলেজের শিক্ষক রামচন্দ্র মিত্রকে এবং ছেলের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু দুরদাস বসাককে। কিন্ত মধুসূদন দত্তকে কোনভাবেই টলানো গেলো না। অথবা বলা যেতে পারে মিশনারীদের প্রবল চাপে তিনি সে সুযোগ পেলেন না।
তাকে ধর্মান্তরিত করা মিশনারীদের কাছে তখন সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপরেই কয়েকদিনের ভিতর এসে গেলো ৯ই ফেব্রুয়ারী। তদানিন্তন ওল্ড মিশন চার্চে মধুসূদন দত্তের দীক্ষার কাজ শুরু হয়ে গেলো। চার্চের সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল প্রচুর স্বশস্ত্র প্রহরী। চার্চের প্রধান পুরোহিত এবং অন্যতম প্রভাবশালী একজন ধর্মজাত টমাস টি আর টি পবিত্র জল ছিটিয়ে মধুসূদন দত্তের অতীতের সব পাপ ধুইয়ে দিলেন। এরপর শুরু হল দীক্ষা প্রদান অনুষ্ঠান।
দীক্ষা শেষে মধুসূদন দত্তের নাম হল মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এই ঐতিহাসিক ঘটনাটির বছরটি ছিল ১৮৪৩ সাল। তখন তাঁর বয়স মাত্র উনিশ বছর। ছোটবেলা বইতে পড়েছিলাম কবি হিসাবে ইংরেজদের কাছে স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষে কবি মধুসূদন দত্ত খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তা কিছুটা সত্য হলেও আসল ঘটনাটি ছিলো আরো গহীন।
বলাবাহুল্য সেই ঘটনাটি ছিল এক কথায় কৌতূহল উদ্দীপক। গল্প উপন্যাসের চাইতে বেশ আকর্ষণীয়।
ডিরোজিও এর মৃত্যুর ৬ বছর পর ১৮৩৭ সালে মধুসূদন দত্ত হিন্দু কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ডিরোজিও থাকলেও কলেজে ডিরোজিওএর শীর্ষদের প্রভাব ও প্রতাপ ছিল অপরিসীম। তবে ডিরোজিও এর শিষ্যদের মতো মধুসূদন দত্ত কখনো কোনো সামাজিক বিষয়ে নিজের মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করেননি। কারণ তাঁর কাছে একমাত্র সত্য ছিল কবিতা।
কবিতা লেখার জন্য কবি হওয়ার জন্য তিনি জীবনের যেকোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলেন। ইংরেজ কবি আলেকজেন্দার পোপের একটি কথা সেসময় মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন। আলেকজেন্ডর পোপ বলেছিলেন কবিতার জন্য দরকার হলে আপনজনদের এমনকি বাবা মাকেও ত্যাগ করতে হবে। এই কথাটি তখন মধুসূদন দত্তের জীবনে ধ্রুব সত্য হয়ে উঠেছিল।
তা কবে তিনি প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনুমান করা হয় যে ১৮৪১ সালে তাঁর কবিতা লেখার শুরু। কারণ ১৮৪২ সালে প্রথমবার তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। যে কথাটি এখানে বলা দরকার তা হচ্ছে তাঁর নিজের কবিতা সম্পর্কে সবসময় উচ্চ একটা ধারণা ছিল, একটা অহংকারী মনোভাব ছিল। তাঁর আশংকা ছিল যে দেশে থাকলে কবি হিসাবে তিনি স্বীকৃতি পাবেন না। তিনি মনে করতেন যে বড়ো কবি হতে হলে ইংল্যান্ড-এ যাওয়া দরকার। পাশাপাশি তিনি এটাও জানতেন যে একমাত্র সন্তান হিসাবে তিনি বাবা মায়ের আদরের দুলাল সবে ধন্ নীলমণি। তারা কখনোই তাকে বিলেতে যেতে দেবেন না। সেজন্য তিনি ঘনিষ্ঠতম বন্ধু গৌরদাস বসাককে তাঁর বিলেতে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছাকে প্রকাশ করেছিলেন।
কারণ বিলেতই ছিল তার সব চাইতে প্রিয় কবিদের বাসভূমী। বলা বাহুল্য তাঁর প্রিয় কবিদের দলে ছিলেন ওয়ার্ডওয়ার্থ, কিটস, শেলী, লর্ড বায়রন প্রমুখ জগতবিখ্যাত রোমান্টিক কবিরা। এইসব কবিদের মধ্যে তাঁর আবার প্রিয়তম কবি ছিলেন লর্ড বায়রন। বায়রনকে তিনি এতটাই পছন্দ করতেন যে তাঁর লেখা সব কবিতা শুধু পড়েননি, তিনি তাঁর জীবনীও বেশ মনোযোগ সহকারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছিলেন। জানতে পেরেছিলেন বাইরণের জীবনে নারীসঙ্গের কথা। আর এইসব থেকে ধীরে ধীরে তাঁর মনের ভিতর গড়ে উঠেছিল বিয়ে আর নারী। এই দুই সম্পর্কের এক রোমান্টিক ধারনা।
ভালোবেসে বিয়ে করার এই আদর্শকে মনে গহীনে তিনি স্থায়ী আসন দিয়েছিলেন। অর্থাৎ অন্যের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করার রীতিকে তিনি মনে প্রাণে বর্জন করেছিলেন। প্রেমে পড়া এবং সেই প্রেমিকাকে বিয়ে করা এই নীতিতেই তিনি বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন। এইরকম একটা সময়ে মধুসূদন দত্তের সামনে বিনা মেঘে বজ্রপাত হল। ১৮৪২ সালের ২৭শে নভেম্বর মদুসুদন দত্তের বাবা রাজ নারায়ণ দত্ত জানিয়ে দিলেন আর মাত্র ৩ মাস পরে, ফাল্গুন মাসে তাঁর বিয়ে। পাত্রী অপরূপ সুন্দরী এক জমিদার কন্যা।
তা প্রেম করে বিয়ে করার স্বপ্নে বিভোর মধূসুদন দত্তের পৃথিবীটা যেন একমস্ত ঝাঁকুনি খেল। বাবার মনোনীত পাত্রীকে বিয়ে করা মানে জীবন মরণ এক সমস্যা। বাবার সামনে দাঁড়িয়ে সে কথা বলার সাহস তাঁর ছিল না। এইবার কি করবেন তিনি? সেই নিরুপায় অবস্থায় সেই অসহায় অবস্থায়, তরুণ মধূসুদন দত্তের মাথায় নতুন এক ভাবনা এলো। সেই ভাবনাগুলি অন্য কেউ তার মধ্যে সঞ্চারিত করেছিল কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। মধূসুদন দত্ত ভাবলেন মিশনারিদের কাছে গিয়ে যদি তিনি খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব।
খ্রিস্টান হলে একদিকে যেমন সঙ্গে সঙ্গে বিয়েটা ভেঙে যাবে তেমনি অন্যদিকে খ্রিস্টান হলে খ্রিস্টান সমাজে ও ইংরেজ কর্মকর্তাদের কাছে তাঁর একটা সম্মানজনক অবস্থান তৈরি হবে। যার ফলে ইংরেজদের সহযোগিতায় স্বপ্নের বিলেত যাত্রাটি হয়ে উঠবে সহজসাধ্য। এখানে মনে রাখার দরকার যে সেই সময়ে বিলেত যাত্রা সহজসাধ্য ছিলোনা। তখন কিন্তু শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোকের বিলেতে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তাদের মধ্যে তেমন তৈরি হয়নি। বিলেতে গিয়েছিলেন সেই সময় মাত্র ৩ জন। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষিত মুসলমান মির্জা আবু তালিব খান, ১৮৩০ সালে রাজা রামমোহন রায় এবং ১৮৪০ এর দশকে দ্বারকানাথ ঠাকুর। অর্থাৎ বিলেতে যাওয়া ছিল সেই সময় বেশ উল্লেখযোগ্য একটা ব্যাপার।
মধূসুদন দত্ত ভেবেছিলেন ইংরেজরা বিলেতে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করেন তাহলে বিলেতে যাওয়াটা দুঃসাধ্য হবে না। তাই খ্রিষ্টান হয়ে বিলেত যাবেন বলে মনস্থির করেছেন। কিন্তু খ্রিষ্টান হওয়ার উপায়টা কি? কার সঙ্গে বা তিনি কথাবার্তা বলবেন, বা কে তাকে সাহায্য করবেন? এইসব অনেক চিন্তাভাবনা করে তিনি শেষ পর্যন্ত গোপনে যোগাযোগ করলেন কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি অনেক বছর আগে হিন্দু থেকে খ্রিস্টান হয়ে হয়েছিলেন। তিনি ক্রাইস্ট চার্চের পাদ্রি হয়েছিলেন। মধুসূদন দত্ত অত্যন্ত সঙ্গোপনে কাউকে কিছু না জানিয়ে তার কাছে হাজির হলেন। তাকে বললেন তিনি খ্রিষ্ঠান ধর্মে দীক্ষিত হতে চান।
কিন্তু তাঁর শর্ত একটাই। তাকে বিলেতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় উপলদ্ধি করলেন যে খ্রিস্টান ধর্মে দিক্ষিত হওয়ার চেয়ে বিলেত যাওয়ার আগ্রহ বেশি। তিনি তার উপরিওয়ালা এংলিকান চার্চের ধর্মযাজক টমাস ডিয়াল্ট্রি সাহেবের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি ছিলেন ধর্মান্তরের সপক্ষে একজন ধর্মযাজক। হিন্দু কলেজের ছাত্রদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা, আর প্রলোভন দেখাতে তার মতো আর কেউ ছিলেন না।
সুতরাং মধুসূদন দত্ত যখন তার কাছে গেলেন, বিলেত যাওয়ার শর্ত সাপেক্ষে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। ডিয়াল্ট্রি সাহেব নির্দ্বিধায় আশ্বস্ত করলেন যে মধূসুদন দত্ত যা চাইছেন তাই হবে, কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু আগে তাঁকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হতে হবে।
মধুসূদন দত্ত তখন প্রবল দ্বিধাগ্রস্ত। একদিকে বিয়ের তারিখ এগিয়ে আসছে, ফাল্গুন মাসে বিয়ে। আবার অন্যদিকে তার স্বপ্নের বিলেত যাওয়ার হাতছানি। অবশেষে মধুসূদন দত্ত ধর্মযাজক ডিয়াল্ট্রি সাহেবের আশ্বাসকে বিশ্বাস করেন। ৯ই ফ্রেব্রুয়ারিতে ধর্মান্তরের দিন স্থির হলো।
মধুসূদন দত্ত এই ভেবে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন যে বাবার মনোনীত পাত্রীকে আর বিয়ে করতে হচ্ছে না। কারণ খ্রিস্টান হবার সাথে সাথে বিয়েটা ভেঙে যাচ্ছে। আর তাঁর স্বপ্নের বিলেত যাত্রা আগামীতে ফলপ্রসূ হতে চলেছে। এই সময়য় তিনি কিন্তু নিয়মিত কলেজে যাচ্ছেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। বাড়িতে হইহই করছেন। আর অন্যদিকে সবার অলক্ষ্যে মিশন চালিয়েছ যাচ্ছেন। কাউকে তিনি কোনোভাবে বুঝতে দেননি গোপনে তিনি পা বাড়াচ্ছেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
এরপর এসে গেল সেই দোসরা ফ্রেব্রুয়ারি। সেলুনে ফিরিঙ্গী ছাঁটের চুল কাটালেন। পরের দিন বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেলেন। এরপর ৯ই ফ্রেব্রুয়ারি খ্রিস্টান ধর্মে ধীক্ষা নিলেন। তাঁর নতুন নাম হলো মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এই আলোচনা শেষ করার আগে পরবর্তী সময়ের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ধর্মান্তরের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে সম্পর্কে আগাম ওয়াকিবহাল ছিলেন না। ধর্মান্তরের পরে হিন্দু কলেজের দরজা তাঁর জন্য চিরতরে বধ হয়ে গেল। বন্ধুবান্ধব, বিশেষ করে তার ঘনিষ্ট বন্ধু গৌরদাস বসাকের সাথে তার যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেল। মা বাবার সাথে যোগাযোগ, বাড়ির দরজা তাও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
যদিও বাবা রাজ নারায়ণ দত্ত সমাজের কাছ থেকে লুকিয়ে গোপনে দীর্ঘদিন তাকে টাকা পয়সা পাঠিয়েছেন। ধর্মান্তরের সময় কবিকে বিলেতে পাঠানোর যে আশ্বাস তারা দিয়েছিলেন, তা সম্ভবত প্রলোভন ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কারণ তারা সেই প্রতিশ্রুতি শেষ পর্যন্ত রাখেননি। এই ঘটনার দীর্ঘ উনিশ বছর বছর পর, ১৮৬২ সালের ৯ই জুনে জাহাজে করে ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেতে পাড়ি দেন। এ কথা বলা বাহুল্য যে বিলেতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসহযোগিতা স্বত্ত্বেও আজীবন খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি আনুগত্য থেকে কবি কখনো সরে আসেননি।